শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর পবা থানা এলাকায় হত্যার ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েও রক্ষা পেল না আসামিরা। এ ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পবা থানা পুলিশ। তারা এ খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত হলো সবুজ আলী (২৮), কাওসার আলী (৪২), সজল আহম্মেদ (২৮) ও সুইটি খাতুন (২২)। এদের মধ্যে সবুজ রাজশাহী মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানার পশ্চিম বাঘাটা গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে, কাওসার পবা থানার মহানন্দাখালী গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে, সজল একই এলাকার মৃত শহিদুল্লাহ-এর ছেলে ও তার স্ত্রী সুইটি।
পুলিশ জানায়, কোরবানীর ঈদের পরদিন ১ জুলাই রাজশাহী নগরীর পবা থানা পুলিশ নওহাটা দুয়ারী রাস্তায় মধ্যবয়সী অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সে সময় ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়।
পরে লাশের প্যান্টের পকেটে থাকা কোভিড-১৯ টিকা কার্ড পাওয়া যায়। টিকা কার্ড দেখে জানা যায়, মৃতের নাম সুলতান আলী। তিনি রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী গ্রামের নবীর আলীর ছেলে। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের কপালের বাম পাশে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হলে পুলিশ লাশের পোস্টমর্টেম করায়। এরপর গত ২২ জুলাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায় সুলতানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এঘটনায় মৃত সুলতানের স্ত্রী অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পরে থানা পুলিশের টম আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করে। পরে তাদের মধ্যে সজল ও তার স্ত্রী সুইটিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করলে বুধবার তারা খুনের দায় স্বীকার করে।
তারা জানায়, সুলতান ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। দুই মাস আর্গে মোবাইল ফোনে সুইটির সঙ্গে সুলতানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে সুলতান দেখার করার জন্য প্রায়ই সুইটিকে প্রস্তাব দেয়। সুইটি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সুলতান সুইটির তিন বছরের শিশুর ক্ষতি করার হুমকি দেয়। সুইটি বিষয়টি তার স্বামী সজলকে জানালে সজল সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি সজল তার স্ত্রী সুইটির মাধ্যমে সুলতানকে রাজশাহীতে দেখা করার জন্য আসতে বলে। গত ১ জুলাই সুলতান সুইটির সঙ্গে দেখা করার জন্য আসলে সুইটি তাকে রাজশাহীর নাইস গার্ডেনে নিয়ে যায়। নাইস গার্ডেন তারা পৌঁছার পর পরিকল্পনা মোতাবেক সজল, তার বন্ধু সবুজ ও চাচা আনারুলকে নিয়ে গার্ডেনে প্রবেশ করে সুলতানকে নওহাটার দিকে নিয়ে যায়। এসময় আসামিরা তাকে মারপিট করে এবং তার পরিবারের লোকজনদের আসার জন্য বলতে বলে। এতে সুলতান রাজি না হলে অটোরিক্সার ভিতরে আসামীরা সুলতানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজায়। সেই মোতাবেক তারা সুলতাানে লাশ চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেয়। এতে সুলতানের মাথায় যখম হলে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণে সুলতান মারা গেছে বলে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়।