শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসনের পদবিন্যাসে দেখা যাচ্ছে, বিসিএসের ছয়টি ব্যাচের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা জেলাগুলোতে ডিসির পদে থাকবেন, যারা সেই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন।
৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা থাকবেন ইউএনও পদে, যারা পালন করবেন সেই নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব। ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ২০০৬ সালের অগাস্টে চাকরিতে যোগ দেন। আর ২০০৮ সালের নভেম্বরে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, “২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসির পদ থেকে তুলে সেখানে ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।”
২২তম ব্যাচের ২০ জন ডিসির দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি ২৪তম ব্যাচের ২৯ জন এবং ২৫তম ব্যাচের ১৫ জন কর্মকর্তা বর্তমানে ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। উপসচিব পদমর্যাদার ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি জেলা থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। এর মধ্যে তিন দিনের ব্যবধানে দুটি প্রজ্ঞাপনে ২০ জনকে জেলা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, “চলতি মাসের মধ্যে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। ২২তম ব্যাচের সব কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হবে।” কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসি হিসেবে কর্মরত ২২তম বিসিএস ব্যাচের ২০ জন কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির আওতায় আসবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নতুনদেরও এই মাসের মধ্যেই পদায়ন শেষ করতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইউএনও হিসেবে ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নতুন করে পদায়ন করা হচ্ছে। আগে থেকে ৩৩ ও ৩৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ইউএনও দায়িত্বে আছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ডিসির দায়িত্ব দিতে ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ফিটলিস্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৫তম ব্যাচের ১৫ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন, এই ব্যাচ থেকে আরও কয়েকজনকে ডিসি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ফিটলিস্ট তৈরি করা হবে। তবে নির্বাচনের আগে তাদের ওই দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন করে ২৭তম ব্যাচ থেকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনও করতে তাদের ফিটলস্ট চূড়ান্ত করে উপজেলা প্রশাসন ও উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এই ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২৪তম ব্যাচের দুয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
নির্বাচন কমিশনের অত জনবল না থাকায় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়েই সেই কাজটি সারা হয়। সংসদ নির্বাচনে মহানগরগুলো বাদে জেলাগুলোতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব ডিসিরাই পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের সংসদীয় আসনগুলোতে এই দুই বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে সব ইউএনওদের সঙ্গে কয়েকটি সংসদীয় আসনে কয়েকজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি), স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার। তার অধীনে আইন শৃঙ্খলাসহ ভোটের যাবতীয় কাজ। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর গণবিজ্ঞপ্তি জারি, মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া, বাছাই থেকে নির্বাচনী এলাকার ভোটের সব ব্যবস্থা নেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণবিধি অনুযায়ী কাজ করেন রিটার্নিং অফিসার। ইসির তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন পরিচালনার সব কাজ তত্ত্ববধান করবেন এবং ইসি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করেন।
এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে মাঠ প্রশাসনে রদবদলকে উদ্দেশ্যপূর্ণ বলছে বিরোধী দল; যদিও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেন, “কয়েকটা পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে পুলিশের ব্যাপক রদবদল, ব্যাপক পদোন্নতিৃ গতকাল যে কাজটি করা হয়েছে, সচিবদেরও রদবদল, অর্থাৎ প্রশাসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা তাদের মত করে সব কিছু সাজিয়ে ত্লুছে।”
তবে এটা ‘নিয়মমাফিক’ পদক্ষেপ দাবি করে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, “কারণ যুগ্মসচিবদের ডিসি পদে রাখা হয় না। এটা নিয়মমাফিক রিপ্লেসমেন্ট। “নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসন সাজানো হচ্ছে বলে যারা দাবি করছেন, তাদের দাবি ভিত্তিহীন। কারণ প্রত্যেকটা জিনিসই নিয়মমাফিক করা হচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করে বা কাউকে সুপারসিড করেও কিছু করা হয় না। যখন যেটা দরকার, তখন তা করা হয়। আমাদের ভেতরে কোনো ধরনের কোনো সংকীর্ণতা রাখিনি। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও পাফরম্যান্স দেখি।”
যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে দাবি করে ফরহাদ বলেন, “নিয়োগের পর তাদের প্রশাসনিক কাজগুলো বুঝে নিতে হবে। নির্বাচন বড় বিষয়। নির্বাচনের আগে প্রকল্পের কাজগুলোও ডিসিদের শেষ করতে হবে। পাশাপাশি ধারাবাহিক উন্নয়ন চলতে থাকবে, সেখানে যাতে ভাটা না পড়ে।”