রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মোহনপুর প্রতিনিধি: মোহনপুর উপজেলার অধিকাংশ পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছেও অবৈধভাবে টোল নেওয়া হচ্ছে। ফলে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাকশিমইল গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে মিরাজুল ইসলাম মতিন ও সাব্বির রহমান সানি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছেন। এদিকে প্রতিটি হাটে টোল আদায়ের মূল্য তালিকা টাঙানো বাধ্যতামূলক কিন্তু উপজেলার কোন হাটে তালিকা টাঙানো বা সাঁটানো হয়নি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামিম আহম্মেদ প্রতিবেদকে জানান, গবাদিপশুসহ ১২৫ ধরনের দ্রব্য বেচাকেনার জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু, মহিষ, ঘোড়া, উট সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ৮০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে শুধু ক্রেতা টোল দেবেন।
এ সংক্রান্ত নিদের্শনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ১৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে ৭-৮ টি হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে কেশরহাট, উল্লাপাড়া, মৌগাছি, ধোপাঘাটা হাটে অতিরিক্ত টোল নেওয়া হচ্ছে।
কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত টোল আদায়ের পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও অবৈধভাবে টোল নেওয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার জাহানাবাদ ইউনিয়নের উল্লাপাড়া ও শনিবার কেশরহাট হাটে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলার তাঁতী গ্রামের এরশাদ আলী বলেন, ‘এই হাটে কোরবানির একটি গরু কিনে আমাকে ৮শত টাকা টোল দিতে হয়েছে তাদের মূল্যবিহীন একটি ছাড়পত্র দেয়া হয়। সেখানে টোল আদায়ের টাকার (অঙ্ক) পরিমাণ নেই।
শুধু ছাড়পত্রে গরুর ক্রয়মূল্য লেখা রয়েছে। বাকশিমইল গ্রামের জহির রায়হান জানান একটি ছাগল ক্রয় করে ৬ শত টাকা দিতে হয়েছে।
সাব্বির হোসেন মিরাজুল ইসলাম মতিন জানান, ইজারাদার সাইফুল ইসলাম মোহনপুর মহিলা কলেজ লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত থেকে কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘধরে বিভিন্ন হাটে ইজারাদারের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বর্তমানে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে তার নিজ নামে উল্লাপাড়া হাট ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে টোল আদায় করছেন।
অভিযোগ কারী টোল আদায়ের বিষয়ে বলেন আদায়ের মূল্য তালিকা থাকলে ইজাদারেরা অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবেন না। তাই ইজাদারেরা মূল্য তালিকা লাগান না। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
উল্লাপাড়া হাট ইজারদার সাইফুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ জানান, ঈদের সময় হাটে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ ও ডেকোরেশন করতে হয়। এ জন্য খরচ বেড়ে যায়। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে সামান্য টাকা বেশি নেওয়া হয়। এছাড়া তারা আরো বলেন, উপজেলা কোন হাটে ছাড় পত্রে ছাড়ের টাকা উল্লেখ করা হয় না।
গত শনিবার কেশর হাটে গিয়েও একই ধরনের দৃশ্য চোখে পড়ে। পুরপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এই হাটে একটি গরু বিক্রি করি। কিন্তু আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা টোল নেওয়া হয়। হরিদাগাছি গ্রামের এমদাদুল জানান, এই হাটে কোরবানির গরু কিনে ৬০০ টাকা টোল দিতে হয়েছে।
এদিকে কেশরহাট ইজারদার আবুল কালাম দিং অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্ জোহরা জানান, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিকট হতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সে বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমে পশুর হাটগুলোতে মনিটরিং করা হবে।