সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার : বুধবার সকাল থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া ছিলো সহনশীল। হালকা মেঘের আবরণে সূর্য উঠে এদিন। এ আবহাওয়ায় সকাল ৮ টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শুরুতে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রমুখি হয় মানুষ।
তবে বেলা ১১ টা বাজতেই বাগড়া হয় বৃষ্টি। প্রথমে মুষলধারে ও পরে গুড়ি গুড়ি বৃস্টিতে ছন্দপতন ঘটে ভোট প্রদানে। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর চমৎকার আবহাওয়ার সৃষ্টি হলে দুপুরের পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
মুল শহরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো বেশী। তবে শহরের উপকন্ঠের কেন্দ্রে অনেকটা ফাঁকা ছিলো। বেলা ১ টায় রাজশাহীতে মোট ৩০ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে বলে দবি করেন রাসিক নির্বাচনের রিটার্ণিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন।
সকাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনা ছাড়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ। প্রশাসনের কড়াকড়ি ও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল থেকে যানবাহন চলাচলে ছিলো বাধ্য বাধকতা। গাড়ি-ঘোড়া চলেনি। রিকশা চলাচলও ছিলো সীমিত।
তাই পায়ে হেটেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকালের দিকে কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। মুল শহরের চেয়ে একটু অদুরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো কম, তবে শেষমুহুর্তে উপচে পড়া ভীড় জমে সব কেন্দ্রে। শহরের কেন্দ্রসমুহে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেন নারী ও পুরুষরা। দুপুরের পর কেন্দ্রগুলোতে নারীদের উপস্থিতি ছিলো তুলনামুলক অনেক বেশী। নগরীর গুরুত্বপূর্ন বেশ কিছু কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এমন পরিবেশ দেখা যায়।
সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে থেকেই কেন্দ্রের সামনে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। লম্বা লাইন দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেন ভোটারেরা। কোন প্রকার চাপ বা গণ্ডগোল ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোটারেরা। তবে ভোট গ্রহণের শেষ সময়ে কিছু কিছু কেন্দ্রে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
দিনের শুরুতেই সকাল ৯ টায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোট প্রদানের পর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে।
খায়রুজ্জামান লিটন সমৃদ্ধ রাজশাহী গড়ার লক্ষ্যে আবারও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে বলেন, বিএনপিসহ অন্য সব দল এই নির্বাচনে এলে আরও ভালো লাগতো। তারা নির্বাচনে না এসে ভুল করেছেন। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শেষ পর্যন্ত এমন পরিবেশই থাকবে। রাজশাহী শান্তির নগরী এখানে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলেন লিটন। লিটন বলেন, পরিবেশ ভালো আছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ভোট দেবেন। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে ৬০ শতাংশের ওপরে ভোট কাস্টিং হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে নগরীর আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। একই সময় ওই কেন্দ্রে পরিদর্শনে যান খায়রুজ্জামান লিটন। এসময় ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করেন নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থী। এ সময় ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন লাঙ্গলের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। তিনি বলেন ইভিএমে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। তারপরেও ভোটের ফলাফল তিনি মেনে নিবেন।
লিটনকে জড়িয়ে ধরে স্বপন বলেন ‘আমরা চাচা-ভাতিজা। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো। তবে ভোটের মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাঠের বাইরে আমাদের সম্পর্ক সম্পর্কের মতোই থাকবে।
রাসিক নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। বেলা ১২টায় নগরীর জুলফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে তিনি এই মনোভাব প্রকাশ করেন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ভোটের পরিবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। ইভিএম নিয়ে মানুষের মাঝে যে কনফিউশন ছিল, তা এখন থাকার কথা নয়। কারণ, আমি যাকে ভোট দিলাম, ভোটটি সেই পেল কিনা; তা ইভিয়েমের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
বাদশা বলেন, মেয়র পদে এখানে খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমন বলার কোনো অবকাশ নেই। কারণ আমাদের যিনি মেয়র প্রার্থী, তিনি এবার বিজয়ী হলে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হবেন। সুতরাং তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্য কোন প্রার্থীর তুলনা করা চলে না। ফলে জনগণের বিবেচনায় আমাদের মেয়র প্রার্থী অনেকাংশে এগিয়ে আছেন।
এদিকে সকালে নগরীর ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এসব ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রের ভোটরদের উপচেপড়া ভীড়। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবি হিন্দু একাডেমী কেন্দ্রে বেলা ২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায় ভোটরদের উপচেপড়া ভীড়। কেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চলছে। আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সহায়তা করছে।
ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রাণী দাশ নামের বৃদ্ধা বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। ভোট কেন্দ্রে খুবই শান্ত পরিবেশ।
নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দারুস সালাম আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রেও বেলা আড়াইটার দিকে উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে। ভোটাররা বলেন, ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে একটু বেশী দেরি হচ্ছে। তাই ভোটারদের লাইনে দাড়াতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
এবারের ভোটে বিএনপি না থাকলের নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। নগরীর সাবিত্রি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও উপচেপড়া ভীড়। এখানকার প্রিসাইডিং অফিসার জানান, বেলা আড়াইটায় তাদের ৪০ শতাংশের বেশী ভোট কাস্ট হয়েছে।
বেলা ৩ টায় নগরীর ডাঁশমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভোটের ৩৫ শতাংশ কাস্ট হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার। এসময় অপেক্ষমান ভোটারদের লম্বা লাইন স্কুলপ্রাঙ্গন ছাড়িয়ে সড়কের ওপরেও চলে আসতে দেখা গেছে।
ইভিএমে ধীর গতির কারণে ভোট প্রদানে বিলম্ব ও বাইরে লম্বা লাইন বাড়ছে বলে মনে করেন ভোটররা। নগরীর মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র্রে মহিলা ভোটারদেরকেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সেখানে পুরুষ ভোটারাও লাইনে অপেক্ষমান ছিলো।
দুপুরের আগে বৃষ্টির বাগড়ায় হঠাৎ করে কেন্দ্রসমুহে ভোটার উপস্তিতি হাতশাজনক হলেও দুপুরের পর থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ ফিরে আসে সব কেন্দ্রে।
রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মাঝে কিছুক্ষণ বৃষ্টি ও দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, সুষ্ঠু ও শন্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণকালে কোথাও কোনো গোলযোগের সৃষ্টি হয়নি। ভোট গননা ও পরবর্তি সময় পর্যন্ত পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যা সক্রিয় রয়েছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে একটানা ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৩০টি ওয়ার্ডে ১৫৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় শান্তিপূর্ণভাবে। এবার ১ হাজার ১৫৩টি কক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী ছাড়াও ১১২ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য লড়ছেন ৪৬ প্রার্থী। রাজশাহী সিটিতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন, আর নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬ জন।


প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ | সময়: ৪:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর