বুধবার, ৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথম ইনিংসে বিশাল লিড, দ্বিতীয় ইনিংসে সেই লিড আরও হৃষ্টপুষ্ট। কোনো ব্যাটসম্যানের জোড়া সেঞ্চুরি, কারও সেঞ্চুরি, একের পর এক বড় জুটি। অসহায় হয়ে ইনিংস ঘোষণার অপেক্ষা। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা এক সময় কম পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। মিরপুরে এবার আফগানদের পেতে হচ্ছে সেরকমই তেতো স্বাদ। সেই পরিক্রমায় গড়া হয়েছে কিছু রেকর্ড, ধরা দিয়েছে নানা মাইলফলক ও অর্জন।
লিডের এভারেস্ট: দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের লিড ৬৬১। বাংলাদেশের প্রায় ২৩ বছর আর ১৩৮ ম্যাচের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লিড এটিই। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ৪৭৬ রানের লিড। টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে বড় লিড আছে আর স্রেফ ৭টি। সবচেয়ে বেশি লিডের বিশ্বরেকর্ড ইংল্যান্ডের। ১৯৩০ সালে সেই সময়ের নবীন টেস্ট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জ্যামাইকায় ইংলিশরা ইনিংস ছেড়েছিল ৮৩৫ রানে এগিয়ে থেকে।
ঝড়ের গতি: নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ ওভারে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ওভারপ্রতি রান ৫.৩১। দলীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ওভারপ্রতি রান এটিই। দুই মাস আগেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে ১৩৮ রান তাড়ায় ৭ উইকেটের জয়ে ওভারপতি রান ছিল ৫.০৭। এই দুটি ছাড়া আর কখনও ওভারপ্রতি পাঁচ রান তুলতে পারেনি তারা।
আটশর আঙিনায়: দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের রান। নিজেদের ইতিহাসে চতুর্থবার ম্যাচে ৮০০ রান করতে পারল তারা। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৮৭ রান এখনও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। মিরপুরের মহারাজ: মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের কৃতিত্ব এখন নাজমুল হোসেন শান্তর। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি খেলেন ১২৪ রানের ইনিংন। ম্যাচে মোট রান ২৭০।
আগের রেকর্ডটি ছিল আজহার আলির। ২০১৫ সালে তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে করছিলেন ২৫১। প্রথম ইনিংসে তার ২২৬ রান এখনও এই মাঠের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন ২৫ রান। এই মাঠে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি ছিল আগে দুজনের। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরান পাওয়েল করেন ১১৭ ও ১১০, ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেইলর ১১০ ও ১০৬*।
নতুন উচ্চতায়: বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড আগেই ছিল মুমিনুলের হকের। আরেকটি সেঞ্চুরিতে এবার তিনি বাড়িয়ে নিয়েছেন তা। ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি এখন ১২টি। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি ১০টি করে।
চারের স্রোত: দুই ইনিংস মিলিয়ে এই টেস্টে ৩৮টি চার মেরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এক টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি চারের রেকর্ড এটিই। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের ইনিংসে ২৩ চার মেরেছিলেন তিনি, দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রানের ইনিংসে চার ১৫টি। আগের রেকর্ড ছিল তামিম ইকবালের। ২০১৯ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে ১২৬ ও ৭৪ রানের ইনিংসে এই ওপেনার চার মেরেছিলেন ৩৩টি।
মুমিনুলের সঙ্গী শান্ত: বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির একমাত্র কীর্তি এতদিন ছিল মুমিনুল হকের। এবার ক্রিজে তাকে স্বাক্ষী রেখেই এই রেকর্ডে সঙ্গী হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও উপহার দিলেন সেঞ্চুরি। মুমিনুলের পরই শান্ত: জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি ছোঁয়ার পর মুমিনুল হকের আরেকটি রেকর্ড ছোঁয়া বা পেরিয়ে যাওয়ার হাতছানি ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর সামনে। একটুর জন্য তিনি পারেননি তা।
এই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে শান্তর রান ২৭০। এক টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এটি। রেকর্ডটি এখানে মুমিনুলের। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি করেছিলেন ২৮১ রান। সেবার প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৫।
মুশফিকের পাশে মুমিনুল: মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি এতদিন ছিল মুশফিকুর রহিমের। এবার তাকে স্পর্শ করলেন মুমিনুল হক। দুজনেরই সেঞ্চুরি এখন ৪টি করে। ইনিংস অবশ্য অনেক কম খেলেছেন মুমিনুল। তার লেগেছে ২৯ ইনিংস। মুশফিকের ৪ সেঞ্চুরি ৪৫ ইনিংসে।
আফগানদের যন্ত্রণা: আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করার প্রথম নজির গড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আফগানদের বিপক্ষে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানও এখন তার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার রান ২৭০। আফগানদের বিপক্ষে এক টেস্টে আগের সর্বোচ্চ ছিল শন উইলিয়ামসের। ২০২১ সালে আবু ধাবি টেস্টে জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ১৫৯।