চারঘাটে বাধার মুখেও থামছে না পুকুর খনন

মিজানুর রহমান, চারঘাট: রাজশাহীর চারঘাটে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করতে বাধা দেয়ায় গ্রামবাসীর সঙ্গে পুকুর খননকারীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন সময় পুকুর খননকারী ও গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চারঘাট সদর ইউনিয়নের মুংলী দাড়ের মাঠ এলাকায়। পুকুর খনন বন্ধে কার্য্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন গ্রামবাসী।
সরজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভায়ালক্ষিপুর এলাকার বাহার আলীর ছেলে প্রভাবশালী আজাহার আলীর নেতৃত্বে মুংলী এলাকার অবৈধ পুকুর খননকারী আনোয়ার হোসেন, মামুন আলী ও সাইদুল ইসলামসহ একটি চক্র গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার চারঘাটের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করে আসছে।
তারই প্রেক্ষিত গত শুক্রবার থেকে চারঘাটের বুদীরহাট-ফরিদপুর মোড় রাস্তার পাশে প্রায় ১৪ বিঘা জমির উপর পুকুর খনন কাজ শুরু করে। দিনের পরিবর্তে রাতের বেলায় ওই এলাকায় পুকুর খনন করায় ক্ষুব্ধ হয় গ্রামবাসী। পরে পুকুর খননের খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে রোববার রাতে পুকুর খননকারীদের ধাওয়া দেয়। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে পুকুর খননকারীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ উঠেছে অবৈধ পুকুর খননকারীরা ভাড়াটিয়া গুন্ডাবাহিনী দিয়ে রোববার রাতে ওই এলঅকায় আবারও পুকুর খননকাজ শুরু করলে বিরোধ বাধে গ্রামবাসীর সঙ্গে। খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে চারঘাট মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুকুর খননকারীরা পালিয়ে যায়।
এ খবর স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে পেরে সোমবার সকালে সরজমিনে গেলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে রাস্তার পাশে পুকুর খনন করলে এক দিকে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে সদস্য নির্মিত রাস্তা ভেঙ্গে মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সেই সঙ্গে আশপাশের কোন জমিতেই আর ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। সারা বছরই জ্বলাবদ্ধতা লেগেই থাকবে। তারপরও একটি কুচক্রি মহল জোর করে এখানে পুকুর খনন করতে চাই। তবে প্রানে রক্ত থাকা পর্যন্ত এখানে কোন ধরণের পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষনা দেন ওই এলাকার একাধিক ব্যাক্তি।
ওই এলাকার এরাশাদ আলী,মসলিম উদ্দিন, লিযাকত আলীসহ একাধিক ব্যাক্তি বলেন, আনোয়ার, আজাহার আলী, মামুন, সাইদুল গ্রামবাসীর বাধা উপেক্ষা জোর করে এখানে পুকুর খনন করতে চাই। এখানে পুকুর খনন করলে আশে পাশের ফসলী জমিতে দেখা দেবে জ্বলাবদ্ধতা। সারা বছরই লেগে থাকবে জ্বলাবদ্ধতা। কৃষক আর ফসল ফলাতে পারবে না।
তারা বলেন, যেখানে চারঘাট-বাঘার মাটিও মানুষের নেতা, চারঘাট-বাঘার অভিভাবক শাহরিয়ার আলম এমপি নিজেই পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও পুকুর খননকারীরা রাতের আঁধারে পুকুর খনন করছেন। প্রশাসন এদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ দিকে মুংলী দাড়ের মাঠ ছাড়াও অনুপমপুর চৌধুরীপাড়ার মাঠে দেদারছে চলছে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন। দিনের বেলায় বাধা দেয়ায় রাতের বেলায় চলছে পুকুর খনন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুপমপুর এলাকার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, যে মাঠে এক সময় সবুজের সমারোহে প্রানটা জুড়িয়ে যেত। আজ সেই সবুজের বুক চিরে শুধু পুকুর আর পুকুর। দেখার যেন কেউ নেই। এটাই যেন চারঘাটে এখন আইন। গোটা উপজেলা জুরেই এমন কর্মকান্ড ধারাবাহিক ভাবে চলে আসলেও সবাই যেন উদাসিন। দায়িত্ব বোধও যেন নষ্ট হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, অবৈধ পুকুর খননের খবর পেলেই সেখানেই নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। তারপরও রাতের আধারে এমন কর্মযজ্ঞ চললে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে এসব বন্ধে জনগনকেই সচেতন হতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াইলেই অপরাধীরা এসব অবৈধ কর্মকান্ড করার সাহস পাবে না।


প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ