রবিবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বং।
সানশাইন ডেস্ক: জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিস্থিতি ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে’ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
দেশে এখন দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে; এ পরিস্থিতিতে রোববার সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী। লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, “লোডশেডিং বেড়ে গেছে। আমাদের গ্যাস, কয়লা ও তেল দিতে সময় লাগছে। এ কারণে আমরা দেখছি প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মত লোডশেড হচ্ছে। এটা থেকে আমরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে পারব।
“আমি জানি, এখন লোডশেডিংটা অসহনীয় হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চেষ্টা করছি যে, কত দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়।” সংকটের কারণ হিসেবে জ্বালানি ঘাটতির কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। লিকুইড ফুয়েল বা তরল জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রায় অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। এসব কারণে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
“আমাদের কয়লা, তেল ও গ্যাসের জোগান দিতে হচ্ছে। শিল্পকারখানাতেও গ্যাস দিতে হচ্ছে। সব পরিস্থিতি একসাথে এসেছে। যে পরিমাণ রিজার্ভের অবস্থা দেখছি আমরাৃএবং হিটওয়েভের জায়গাটও বেড়ে গেছে। ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে তাপমাত্রা। সেই কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে।”
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে উৎপাদন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটা এখন জ্বালানির কারণে চালাতে পারছি না। আমাদের ফুয়েলের শর্টেজ। অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও তেলের শর্টেজ। আমরা ঠিক মত জোগান দিতে পারছি না। সেই কারণেই এই ঝামেলটা হচ্ছে। তবে আমরা এখন যেভাবে চেষ্টা করছি, তাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটা ভালো জায়গায় যেতে পারব।”
ঢাকায় দিনে, রাতে কিংবা ভোরে বিদ্যুৎ যাচ্ছে নিয়মিত বিরতিতে; ঘড়ির কাঁটায় মেপে মেপে কোথাও আসছে এক ঘণ্টা কোথাওবা এরও বেশি সময় পর, গ্রামের অবস্থা আরও সঙ্গিন। তাপদাহের মধ্যে ভ্যাপসা এ গরমে লোড শেডিংয়ের সেই সময়টুকু যেন এক যন্ত্রণা হয়ে ঘুরে ফিরে আসছে দিনে-রাতের বড় একটা সময়জুড়ে। শুধু ঘরেই ভুগতে হচ্ছে তা নয়, অফিস আর সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের মতো বাদ যাচ্ছে না শিল্প কারখানাও; বিঘ্নিত হচ্ছে উৎপাদন, বাড়ছে ব্যয়।
জ্বালানিটা কেন দিতে পারছেন না এবং জ্বালানির উদ্যোগটাও কেন আগে নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, “আমরা দুই মাস ধরেই চেষ্টা করছিলাম। আমরা জানতাম, এই রকম একটা পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। অর্থনৈতিক বিষয়টা আছে। সময় মত এলসি খোলার বিষয়টা আছে। আমার সময় মত জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। সবগুলো বিষয় আমাদেরকে একসাথে সমন্বয় করে নিতে হয়।
“তবে আশার বাণী হচ্ছে, এটা সামাল দেওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সেই সময়টা আমাদের দিতে হবে। এক/ দুই সপ্তাহ হয়ত কিছুটা কষ্ট করতে হবে।” পেট্রোল পাম্প তেল দিতে পারছে না বলে শোনা যাচ্ছে– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পেট্রোলের কোনো অভাব নেই। সমস্যা হচ্ছে হেভি ফুয়েল নিয়ে। সেটা দিয়ে তো আর গাড়ি চলে না। আগামী কাল থেকে বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হবে। সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটা ভালো পরিস্থিতির দিকে যেতে পারব। আমার মনে হয় কারও আশঙ্কা করার কিছু নেই। আমরা এখনও আশাবাদী। আমরা মোটামুটি গুছিয়ে ফেলছি।”
পায়রা ও রামপালে কয়লা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা তো বিদ্যুৎকেন্দ্র রেডি করে রেখেছি। জ্বালানিগুলো তো সময় মত আসতে হবে। সেটা যদি দেরি হয় এবং এটার পেছনের যে বিষয়টা সেটাও যদি দেরি হয়, তাহলে তো বিষয়টা আমাদের হাতে থাকে না। “অনেকে হয়ত বলছেন যে আমরা কেন উৎপাদনে যাচ্ছি না। আমরা তে উৎপাদনের জন্য সদা প্রস্তুত আছি। আমি মনে করি এটা সমন্বয় হয়ে কাজ করা দরকার। সেটা করতে গিয়ে যদি কোনো একটা জায়গায় বাধাগ্রস্ত হয়, সেটা শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানির জোগান দেওয়ার একটা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এবারও তাই হয়েছে। আমরা বহু আগ থেকে বলে আসছিলাম। আমাদের এই জ্বালানির জোগানটা কিন্তু দিতে হবে।”