শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: ‘একটু কি তাড়াতাড়ি হয়ে গেল?’, প্রশ্নটি শুনে মিনহাজুল আবেদীন তাৎক্ষণিক ছুড়ে দিলেন পাল্টা প্রশ্ন, ‘তাড়াতাড়ি কেন হবে? ওরা তো আমাদের পর্যবেক্ষণেই ছিল।” প্রধান নির্বাচকের কোনো সংশয়ই নেই যে, শাহাদাত হোসেন ও মুশফিক হাসান প্রস্তুত টেস্ট ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। একাদশে জায়গা মিললে এই দুই তরুণ নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন বলেও বিশ্বাস তার।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের বাংলাদেশ দলে চমক বলা হয় শাহাদাত ও মুশফিকের নাম। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শাহাদাতের পারফরম্যান্স খুব দুর্দান্ত কিছু নয়। মুশফিকের তো লাল বলের ক্রিকেটে এটিই প্রথম মৌসুম। অভিজ্ঞতা কারও খুব বেশি নেই। তার পরও জায়গা পেয়ে গেছেন টেস্ট দলে।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বললেন, অনেকটা সময় ধরে নজরে রেখেই এই দুজনকে নেওয়া হয়েছে টেস্ট স্কোয়াডে। ‘তাড়াতাড়ি কেন হবে? ওরা তো এইচপিতে ছিল, আমাদের পর্যবেক্ষণেই ছিল। আমরা মনিটর করছিলাম। ‘এ’ দলে তো এমনি এমনি খেলাইনি।” শাহাদাত এমনিতে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত নাম। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অংশ তিনি। তার প্রতিভা, সোজা ব্যাটে খেলার সামর্থ্য, আঁটসাঁট টেকনিক আর টেম্পারমেন্ট নিয়ে চর্চা ছিল তখন থেকেই। তবে বিশ্বকাপের পর খুব মসৃণ গতিতে এগোয়নি তার ক্যারিয়ার। এখনও পর্যন্ত ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে তার সেঞ্চুরি দুটি, ব্যাটিং গড় ৩৬.১৪।
এই মৌসুমে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স ভালো ছিল না মোটেও। জাতীয় লিগ ও বিসিএল মিলিয়ে ১১ ইনিংসে ফিফটি ছিল মোটে ৩টি। জাতীয় লিগে চট্টগ্রামের হয়ে গড় ছিল স্রেফ ১৯.৫৮, বিসিএলে ৩৮.৭৯।
তবে প্রতিভার জন্যই এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) দলে তাকে রাখা হয়েছে বারবার। সুযোগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। সেখানেও পারফরম্যান্সও দেখিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিলেটে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৮০ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টে সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝে ৭৩ ও ৫০ রানের ইনিংস খেলেন। এই ইনিংগুলোই ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে টেস্ট দলে আনতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের দুই পাশে নির্বাচক কমিটির অন্য দুই সদস্য হাবিবুল বাশার ও আব্দুর রাজ্জাক। “ওকে আমরা অনেক দিন থেকেই লঙ্গার ভার্সনের জন্য নজরে রাখছিলাম। ওর মধ্যে সেই টেম্পারমেন্ট আমরা অনেক আগে থেকেই দেখছি। একটি-দুটি ম্যাচ বা মৌসুম দেখে সিদ্ধান্ত নেই না। এবার জাতীয় লিগে ভালো না করলেও আগের দুই বার করেছে।”
“তবে ‘এ’ দলের পারফরম্যান্স আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভালো খেলেছে। আগে ভারতের সঙ্গেও ভালো করেছে। লম্বা সময় উইকেটে থাকার সামর্থ্য তার আছে।” মুশফিকের ডাক পাওয়া আরও চমকপ্রদ। এই মৌসুমের আগে তার নামই সেভাবে পরিচিত ছিল না দেশের ক্রিকেটে। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গিয়ে স্রেফ একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। বিশ্বকাপের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে তার স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক। মোহামেডানের হয়ে সেবার তিনটি ম্যাচ খেলে খরুচে বোলিংয়ে তিন উইকেট নিতে পারেন মোটে।
তবে এই মৌসুমে জাতীয় লিগ দিয়ে তিনি চমকে দেন। রংপুরের হয়ে ৬ ম্যাচে নেন ২৫ উইকেট। দ্রুতই তাকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে নিয়ে নেন নির্বাচকরা। ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে কক্সবাজারে খুব ভালো না করলেও কিছুটা সম্ভাবনার ছাপ রাখেন ৩ উইকেট নিয়ে আর কয়েকটি স্পেলে ভালো বোলিং করে।
এরপর বিসিএলে ৪ ম্যাচে শিকার করেন ১৬ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে এক ম্যাচে নেন ২ উইকেট, আরেকটিতে ৩টি। যথারীতি এবারও কয়েকটি স্পেলে বেশ আগ্রাসী বোলিং করেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার।
বোলিং ফিগার বা উইকেট সংখ্যা দেখে নয়, মুশফিকের ক্ষেত্রে তার বোলিং ও সম্ভাবনা দেখেই নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক। “মুশফিক ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বল করতে পারে ভালো গতিতে। গতিটা ধরে রাখতে পারে সব স্পেলে। শারীরিকভাবে বেশ শক্তিশালী। ‘এ’ দলের ম্যাচগুলিতে ভালো বল করেছে। হয়তো অনেক উইকেট পায়নি, কিন্তু বোলিং ভালো করেছে।”
দুজনের কারও এখনই টেস্ট খেলার বাস্তব সম্ভাবনা যদিও খুব সামান্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে বাংলাদেশের এই টেস্ট শুরু ১৪ জুন। কয়েক জনের চোট সমস্যা বা অতি নাটকীয় কিছু না হলে শাহাদাত-মুশফিকের টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সুযোগ এলেও তারা তা দুহাতে লুফে নিতে তৈরি বলে মনে করেন মিনহাজুল আবেদীন। “আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, ওরা যদি সুযোগ পায়, তাহলে ভালো করতে পারবে। সুযোগ না পেলেও দলের সঙ্গে থেকে শিখতে পারবে।”