সর্বশেষ সংবাদ :

খায়রুজ্জামান লিটনের কার্যক্রম : প্রশস্ত সড়কে নেই যানজট, স্বস্তি নগরবাসীর

শাহ্জাদা মিলন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শেষ। গত মাসের শেষ তিন দিন রাজশাহী শহরে যানজটের কিছুটা কবলে পড়েছিল । তবে ঢাকা সড়কেগুলোর মত ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়নি পরিক্ষার্থীদের যানজটে। পত্রিকা টিভিতে এমন খবর দেখা গেছে ঢাকায় যানজটের কারনে বিভিন্ন সময়ে অনেক পরিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতেও পারেননি। তবে এদিক থেকে রাজশাহী শহরের সড়কগুলো প্রশস্ত ও খানাখন্দমুক্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলেই পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। রাজশাহী শহর জুড়ে এমন যানজট দেখা  মেলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন এ জ্যাম স্বাভাবিক ভাবে ধরে নিয়েছেন কারন সারাদেশ থেকে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা আসছে। তাদের মন্তব্য বর্তমান সময়ে রাজশাহী শহরের প্রশস্ত সড়কের যে সুফল পাচ্ছে নগরবাসী তা দেশের অন্য কোন শহরে অন্য নেই বললেই চলে ।

 

 

 

জানা গেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আধুনিক রাজশাহী গড়তে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সড়ক প্রশস্ত করতে। সেসময় পুরো শহর জুড়ে প্রচারণা চালানো হয় রাস্তা বড় করলে কি কি সুবিধা মিলবে। যদিও কিছু কিছু মানুষ বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে সকলেই নিজ জায়গা ছেড়ে দেন। যার বড় একটি কারন ছিল জমির যা দাম তার চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়া ও যানজট থেকে মুক্ত রাজশাহী গড়তে তৎকালীন মেয়র লিটনের পাশে দাড়ানো। বর্তমানে মহানগরীর প্রত্যেকটি প্রধান সড়কসহ পাড়া মহল্লার অনেক রাস্তা প্রশস্ত হওয়ায় সুফল পাচ্ছে মহানগরবাসী ও বাইরে থেকে আসা সাধারন জনগন।

 

 

৩০ নং ওয়ার্ডের বিনোদপুর নিবাসী মাহফুজ জানান, ভর্তি পরীক্ষার কারনে এখন কিছুটা জ্যাম রয়েছে তবে সারা বছর এর ছিটা ফোটাও দেখতে পাওয়া যায়না। সাবেক মেয়র লিটন সাহেব তো অক্ট্রোয় মোড় থেকে মাসকাটাদিঘী পর্যন্ত ছয় লেন রাস্তার উদ্বোধন করেছিলেন,এখন কাজটি চলমান রয়েছে। এই ছয় লেনের রাস্তা হয়ে গেলে আগামীতে ভর্তি পরীক্ষার কারনে সাময়িক যে জ্যাম হচ্ছে সেটিও থাকবেনা বলে মতামত দেন।

 

 

২৩নং ওয়ার্ডের শেখেরচক এলাকার রুদ্র জানান, বছর খানেক আগেও আলুপট্টি থেকে তালাইমারি পর্যন্ত রাস্তার মাঝখানে কোন ডিভাইডার না থাকা ও ছোট রাস্তা হওয়ায় পারাপারে খুব ভয় লাগত। আমার স্পষ্ট মনে আছে নিহারীকা পূজা মন্ডপের পুরোহিত কয়েকবছর আগে এই রাস্তাতেই দুর্ঘটনায় মারা যান। এখনতো আগের রাস্তার সাথে কোন মিল খুজেই পাইনা। কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি আলুপট্টি থেকে তালাইমারি এতো সুন্দর রোড হবে। আবার মাঝখানে ডিভাইডার দেয়া। ওয়ানওয়ে রোড থাকায় সামনের কোন গাড়ী দ্বারা এক্সিডেন্টে ভয় নেই। আর সড়কে যে লাইট বসানো তাতে রাতে রাস্তায় বের হলে ঈদের মতো মনে হয় প্রতিদিন।

 

 

উপশহর এলাকায় বসবাসকারি ব্যাংকার আব্দুল হাকিম জানান,কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের চাকুরির কারনে রাজশাহী উপশহরে থাকি। আগের উপশহর আর খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হওয়ার পর উপশহর এলাকার পার্থক্য আকাশ পাতাল। আগে পানিতে তলিয়ে যেত ছোট ঠোট রাস্তায় ড্রেনের ময়লা উঠে অনেক বাড়িতে পর্যন্ত তলিয়ে যেতো। সেই উপশহরের রাস্তাঘাট কতো চওড়া। ফুটপাতে হাটার জায়গা দেখতে দেখতে রাজশাহীকে যেভাবে সাজিয়ে তুলেছেন সত্যি কথা বলতে মেয়র পোস্টের মত জায়গাতে উনার বিকল্প কাউকে দেখছিনা।

 

রাজশাহী সিটি কপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামন লিটন এর আমলে ১৬৪ কোটি ১৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীর আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত করে চারলেন সড়কে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। সড়কটির উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের আইল্যান্ডে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

এছাড়া ১৮৯ কোটি ৩৪ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া, মোহনপুর হয়ে চৌদ্দপায়া রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নগরীর ২টি মহাসড়কের পূর্ব-পশ্চিমমুখি ৬.৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ, রেলওয়ে ক্রসিং-এ ১টি ফ্লাইওভার, ১টি ব্রীজ, ৮টি কালভার্ট, মিডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে।

 

১২৬ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ উপশহর মোড় হতে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে রাণীবাজার মোড় হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন।

 

রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প :
১৯৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক ফোরলেন উন্নীতকরণ ও সাথে ড্রেন, ফুটপাত ও বাই সাইকেল লেন নির্মিত হয়েছে। সড়কটিতে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সরণি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ৩৬.৮১ কিলোমিটার নতুন সড়ক, রাস্তা সংস্কার ৫৮.৬৯ কি.মি. ড্রেন ৩৩.৬০ কি.মি এবং ফুটপাত ১২.৪৩ কি.মি কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও সড়কসমূহে দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। কাজটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

 

 

৪৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহের প্রান্তিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কার্পেটিং, সিসি ও নর্দমা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সোনাদীঘি মোড় হতে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কার্পেটিং নতুন সড়ক ৪.৩২ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা সংস্কার ১.৪২কি.মি এবং সিসি রাস্তা ৫৩.২৯ কি.মি. এবং ৩৬.৭২ কি.মি. ড্রেন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

 

 

ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল সড়ক
ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়কের নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কটি প্রশস্ত ৮০ ফুট করা হয়েছে। ফোরলেনের সড়ক ছাড়াও দুই লেনের অযান্ত্রিক যানবাহন লেন, সড়ক বিভাজক ও দুইপাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটিতে দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে।

 

চলমান উন্নয়ন প্রকল্প :
মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সকল ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কি.মি. কর্পোটিং সড়ক, ২৬৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট সড়ক, ৩৫৬ কি.মি নর্দমা, ১০৪ কি.মি ফুটপাত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কার্পেটিং রাস্তা ৯৯কি.মি., কার্পেটিং রাস্তা পূনঃ নির্মান ১০৭ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা প্রশস্তকরণ ৪৫ কি.মি, নতুন সিমেন্ট কনক্রিট ১৮৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট পূন:নির্মাণ ৮০ কি.মি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।

 

৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৬ লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ৪.১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে থাকবে ২মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুইপাশে ১০.৫ মিটারের সড়ক থাকবে। সড়কের উভয়পাশে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশের ৩ মিটার ফুটপাত ও ড্রেন। সড়কটির সৌন্দর্য্য বর্ধণে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। সড়কটির কাজ শেষ হলে এটি হবে বিশ্ব মানের একটি সড়ক।

 

৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। ৩.৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ৮০ ফুট প্রশস্ত করা হ”েছ। উভয়পাশে ২২ ফুট করে ৪৪ ফুট রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের্^ ৬ ফুট করে মোট ১২ ফুট ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার ৪ ফুটের ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বুধপাড়া রেলক্রসিং এ অবশিষ্ট দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩ | সময়: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine