শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
শাহ্জাদা মিলন
‘ক্লিনসিটি রাজশাহী’ নামটি যে কয়েকটি কারনে পরিচিত পেয়েছে দেশ ও বিশ্বের কাছে তার অন্যতম কারন হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সাবেক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইএচএম খায়রুজ্জামান লিটন আধুনিক ও বসবাসযোগ্য মহানগরী গড়তে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গড়ে তোলেন এসটিএস বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন। এই এসটিএসগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যার চারপাশ ইটের দেয়ালে গাঁথা ও প্রায় ৩০ ফিট উচু টিনের সেড রয়েছে।
রাসিকের বাসিন্দাগণ বাসাবাড়ির ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে পরিচ্ছন্নতা কর্মির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে রাখার জায়গা হচ্ছে এই এসটিএস। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে ময়লা না ফেলে এই এসটিএস গুলোতে আবর্জনা রাখা হয়। প্রতিদিনের ময়লা এখান থেকে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রাকের মাধ্যমে। এর ফলে শহরের ময়লাগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা থাকছে এবং পরিবেশ দূষিত না হওয়ায় ক্লিন সিটির তকমা যুক্ত হয়েছে। সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সময় মোট ১২টি এসটিএস নির্মাণ করা করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৫ টির কাজ চলমান রয়েছে।
২০২২ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের টেকনিক্যাল এসিসটেন্ট প্রজেক্ট অন ইনট্রিগেটেড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন তৎকালীন রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
এআইআইবি এর অর্থায়নে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে জানানো হয়। মতবিনিময় সভায় বলা হয় প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। প্ল্যান্টের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে সার ও গ্যাস উৎপাদিত হবে। গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি পরিচালিত হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্র ও সিটি কর্পোরেশন থেকে জানা যায়, পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তোলার জন্য ১ জুলাই ২০০৯ সালে রাত্রীকালীন বর্জ্য আবর্জনা অপসারন কার্যক্রম চালু করেছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২য় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেন। কয়েকবছর ধরে মহানগরবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে। সেসময় ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে মহানগরীতে ব্যপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
দ্বিতীয় মেয়াদে আরো আধুনিক বর্জ্য ববস্থাপনার জন্য এসসিএস নির্মাণ করেন তিনি। এগুলো নির্মাণ ও ব্যবহারের ফলে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে ক্লীন সিটি হিসেবে রাজশাহীর নাম।
সূত্র আরো জানায়, খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালীন ১৪৬৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ‘রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অত্র প্রকল্পের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে এর প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বর্তমান ল্যান্ডফিল্ড প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০৩.০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয়, আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ, ওয়েষ্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ফিক্যাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং রিসাইকেল প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ প্রকল্পের ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার নিমিত্তে আধুনিক ইনসিনারেশন প্ল্যান্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্র্ভূক্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মহানগরীতে ১২টি আধুনিক সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আরো ৫টির কাজ চলমান।
ঐ সূত্রে আরো জানা যায়, সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন পরিচ্ছন্ন গ্রাম,পরিচ্ছন্ন শহর কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহানগরীর অন্তর্গত দক্ষিণ হতে উত্তরমুখী কালভার্ট ও ড্রেনসমূহের কাঁদামাটি উত্তোলন করার নির্দেশ দেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে কালভার্ট ও ড্রেনের পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নগরীর জলাবদ্ধতা ও মশার বংশ বিস্তার হ্রাস পেয়েছে। ফগার মেশিনে কীটনাশক স্প্রে ও লার্ভিসাইড ব্যবহারের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হওয়ায় পরিবেশ দূষণ একেবারেই কমে গেছে ফলে বাসযোগ্য শহরের তালিকাতে দক্ষিণ এশিয়াসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে রাজশাহী শহরের নাম অন্যতম হয়েছে।
সানশাইন / শাহ্জাদা