সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার :
অবশেষে আন্দোলনের মুখে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অতিরিক্ত দায়িত্বের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। আজ রবিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের নিকট জমা দেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পদত্যাগ করেন তিনি। ভিসির ব্যক্তিগত সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব সালাম সেতু পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকাট্রনিক্স বিভাগের প্রভাষক সারাফত হোসেন অভিও পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাত পৌনে ৯টার দিকে অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এসময় আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। পরে তিনি পদত্যাগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের নিকট জমা দেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্ধশতাধিক শিক্ষক নিজেদের পদোন্নতির দাবিতে রোববার বেলা ১১টা থেকে রুটিন দায়িত্বের ভিসি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। অবশেষে চাপের মুখে রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি পদত্যাগ করেন।
রুয়েট ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুলাই রুয়েটের ভিসির পদ শূন্য হয়। এরপর ১০ মাস থেকে রুটিন দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল, ১১ মাস ধরে ক্যাম্পাসে উপাচার্য নেই। অভিভাবক না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। এছাড়া সব শর্ত পূরণ করেও গত ১৫ মাসে অন্তত ৮০ জন শিক্ষক তাদের ন্যায্য পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এসব শিক্ষকদের পদোন্নতির দাবিতে রবিবার বেলা ১১টার দিকে রুয়েট শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতার সঙ্গে শিক্ষকরা উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন। এসময় রুটিন দায়িত্বের ভিসিকে পদোন্নতির বিষয়টি বললে তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই বলে জানান। এরপর থেকেই শিক্ষকরা ড. সাজ্জাদের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি তাকে তার দপ্তর থেকে বের হতে দিচ্ছিলেন না।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ভিসি না থাকায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ বিজ্ঞপ্তির পর আর কোনো নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়নি। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টির নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও থমকে আছে। এভাবে চলতে থাকলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে রুয়েট। এজন্য তারা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ভিসি নিয়োগ দাবিতে আন্দোলন করছিলেন।
রুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল আউয়াল বলেন, ‘সাজ্জাদ হোসেনের নিয়োগে রুয়েটের নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়। নিয়মে উল্লেখ আছে, প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষক ছাড়া অন্য কেউ ভিসির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু তারপরও তাকে দিয়েই দীর্ঘ ১০ মাস থেকে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছিলেন। অথচ তার কারণেই ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষকগণ নানামুখি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে হয়তো দ্রুত এই ক্ষতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় উৎরিয়ে উঠবে।’
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রুয়েট রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন জানান, পদত্যাগপত্র পেয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পদত্যাগ করেন তিনি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
সানশাইন / শামি