শনিবার, ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা: দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা গুলোর মধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চল অন্যতম। এখানকার পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়। গত দুই মাস আগে নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু হলে এখানে দাম ছিল ৪০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়।
অনুরুপ আদার দাম এক মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা কেজি থেকে এখন ৪০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলু এক সপ্তাহ পূর্বে ২৫ টাকা থাকলেও এখন ৩৫ টাকা। চিনি ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, সয়াবিন ৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, সরিষার তেল ১১০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা। একই ভাবে নানা রকম পণ্যের দাম দফায়-দফায় বেড়ে চলেছে। তবে ক্রেতাদের দাবি, এর প্রধান কারণ পণ্য মজুত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেঁয়াজ চাষিরা আরও দাম বৃদ্ধির আশায় ঘরে পেঁয়াজ ধরে রেখেছে। কম করে বাজারে ছাড়ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খোঁজ খবর নিচ্ছে মিডিয়া কর্মীদের কাছ থেকে। একই ভাবে ব্যবসায়ীদের ঘরেও প্রচুর পেঁয়াজ মজুত আছে। আরো মজুত আছে অন্যান্য পণ্য। ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
বাঘার চরাঞ্চলের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক চাষি উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু অংশ বিক্রি করেছে। আর কিছু অংশ ঘরে মজুদ রেখেছে। তারা নিজেদের অর্থের প্রয়োজনে খুব অল্প-অল্প করে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ছে। একই অবস্থা সমতল এলাকা উপজেলার বাউসা এবং আড়ানী সহ অন্যান্য ইউনিয়ন ও দুটি পৌর সভায়।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে চরাঞ্চলের একজন শিক্ষক জানালেন, এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের ঘরে শত-শত মন পেঁয়াজ মজুত আছে। তিনি আরো বলেন, শুধু কৃষক নয়, অসংখ্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, ভুট্টা, সয়াবিন, চিনি, সকল প্রকার মসলা, জিয়া ও বাদাম সহ নানা প্রকার ফসল ঘরে মজুত করে রেখেছে। এ কারণে বাজারে দফায়-দফায় প্রতিটা দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন বলেন, সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন কৃষিতে স্বয়ং সম্পূর্ণ। বর্তমানে যে ভাবে ফসল উৎপাদন হচ্ছে তা থেকে কোন কিছুরই দাম বাড়ার কথা নয়।
একমাস আগে যখন বোর ধান কাটা শুরু হলো তখন বাঘায় ধানের বাজার ছিলো মাত্র ১২ শ টাকা মণ। অথচ এখন সেই ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ’ টাকা মণ।
কতিপয় কৃষক এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রকার পণ্য মজুত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি এবং মজুত ব্যবসা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমরা যে কোন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের সার-বীজ দেয়া থেকে শুরু করে যে ভাবে সহায়তা করে থাকি, তাতে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ার কথা নয়। একটি খবরের কাগজে দেখলাম, শৈলকূপায় একজন চাষির ঘর থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বের করেছে প্রশাসন। এটি আমাদের কাম্য নয়।
মজুত রাখা যাবে, তবে প্রয়োজনের বেশি নয়। তার মতে, এমনি ভাবে যদি সকল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মজুতকারিদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন তাহলে সকল পণ্যের বাজার স্বাভাবিক পর্যায় চলে আসবে।