মঙ্গলবার, ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: লাঞ্চের আগে জোড়া আঘাত সাইফ হাসানের। চা বিরতির আগে দুই উইকেট নিলেন তানভির ইসলাম। দুই স্পিনারের ছোবলে জাগল জয়ের আশা। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে রয়ে গেলেন জশুয়া দা সিলভা। যা আর উপড়ানো সম্ভব হলো না। বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে হতাশায় ডুবিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন সফরকারী অধিনায়ক।
ইরফান শুক্কুরের লড়াকু ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলকে ১৯০ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। জশুয়ার দৃঢ়তার আগে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ফিফটিতে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টে ৩ উইকেটের জয় পায় ক্যারিবিয়ানরা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠে শুক্রবার নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৭ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। জয়ের জন্য ৪০ রান বাকি থাকতে সপ্তম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে আকিম জর্ডানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান জশুয়া।
দারুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরীক্ষা নেন তানভির। ৫২ রানে ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার। এমনিতে খণ্ডকালীন বোলার হলেও এই সিরিজে প্রায় নিয়মিত হাত ঘোরানো সাইফ ধরেন ২ শিকার। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল সফরকারীরা। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মূল মাঠে মঙ্গলবার শুরু হবে দুই দলের শেষ ম্যাচ। ৬ উইকেটে ২৭৪ রান নিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন আর বেশিক্ষণ খেলতে পারেনি তারা। ৬.৪ ওভারে স্রেফ ২৩ রান যোগ করতেই হারায় বাকি ৪ উইকেট।
আগের দিনের ৬৫ রানের জুটিকে আর বেশি লম্বা করতে পারেননি ইরফান ও নাঈম হাসান। দিনের তৃতীয় ওভারে জেইর ম্যাকঅ্যালিস্টারের বলে কট বিহাইন্ড হন ৩৬ বলে ১৭ রান করা নাঈম। ভাঙে ৭৮ রানের জুটি। ওই ওভারেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে লফটেড ড্রাইভে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তানজিম হাসান। কিন্তু অতি আগ্রাসী হওয়ার মাশুল দিতে হয় তাকে। কেভিন সিনক্লেয়ারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তানজিম। শর্ট মিড অফে দারুণ ক্যাচে তার বিদায় নিশ্চিত করেন রেমন রিফার।
চার ওভারের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা করেন ইরফান। অপরপ্রান্তে ব্যাটসম্যানকে বিপদের মুখে ঠেলে না দিতে কয়েকটি সিঙ্গে নেননি বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান। ম্যাকঅ্যালিস্টারের বলে দারুণ স্কয়ার কাটে বাউন্ডারি মেরে দলকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি। তবে পরের ওভারে সিনক্লেয়ারকে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ডিপ মিড উইকেটে। ১০৬ বলে ১২ চারে ৭২ রান করেন ইরফান। তাকে ফিরিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সিনক্লেয়ার। প্রথম ইনিংসে নেওয়া ২ উইকেটসহ তার হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
রান তাড়ায় খালেদ আহমেদের করা তৃতীয় ওভারে প্রথম বাউন্ডারি মারেন কার্ক ম্যাকেঞ্জি। খালেদের পরের ওভারে মারেন আরও দুটি চার। তাকে বেশি দূর যেতে দেননি নাঈম হাসান। তার অফস্টাম্পের বাইরে হালকা টার্ন করা ডেলিভারি অন সাইডে বড় শট খেলার চেষ্টা করেন ম্যাকেঞ্জি। ব্যাটের বাইরের কানায় লাগলে প্রথম স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন নাঈম শেখ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তেজনারাইন চন্দরপল ও রিফার। দ্রুত রান তোলার কোনো তাড়া না থাকায় রয়েসয়ে খেলতে থাকেন দুজন। সুযোগ পেলে অবশ্য বাউন্ডারি মারতে ছাড়েননি তারা।
লাঞ্চ বিরতির কিছুক্ষণ আগে আক্রমণে এসে এই জুটি ভাঙেন সাইফ। তার দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দেন রিফার। ৩ চারে ২২ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। রিফারের বিদায়ের পর হুট করেই যেন ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়েন চন্দরপল। ইনিংসের শুরু থেকে মন্থর ব্যাটিং করতে থাকা বাঁহাতি ওপেনার বিরতির আগের ওভারে সাইফের প্রথম দুই বলে মারেন ছয় ও চার। পরের বলে আবারও বড় শট খেলতে যান চন্দরপল। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লাগা বল তালুবন্দী করেন প্রথম স্লিপে থাকা নাঈম শেখ। উল্লাসে ফেটে পড়েন সাইফ।
৩ চার ও ১ ছয়ে ৬৬ বলে ২২ রান করেন চন্দরপল। বিরতির পর ফিরে জোড়া আঘাত হানেন তানভির। লেগ স্টাম্পের বল স্লগ করতে গিয়ে সোজা স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দেন আলিক আথানেজ (১৫ বলে ৪)। তানভিরের পরের ওভারে ভুল লাইনে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন কিসি কার্টি।
৭০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। ঘুরে দাঁড়াতে শুরুতে পাল্টা আক্রমণের পথ ধরেন জশুয়া। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই স্কয়ার ড্রাইভে মারেন বাউন্ডারি। অপরপ্রান্তে তাকে যথাযথ সঙ্গ দেন কিং। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা কিং এবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করেন দারুণ এক ফিফটি। ৬ চার ও ২ ছয়ে ৭০ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। জশুয়ার সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৭৬ রান। যা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের জয়ের আশা।
চা বিরতির আগে এই জুটি ভেঙে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান তানভির। মিডল স্টাম্পে পিচ করে ছোট্ট টার্নের সঙ্গে হালকা বাউন্সে বোকা বনে যান কিং। বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে চলে যায় সিলি পয়েন্টে থাকা শাহাদাত হোসেনের হাতে। ৫৪ রান করেন ফেরেন কিং। প্রথম ম্যাচের দুই ইনিংসেও তিনি করেন ০ ও ৫৪ রান।
ওই ওভারে সিনক্লেয়ারকেও ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান তানভির। কিছুটা নিচু হওয়া আর্ম ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলেন সিনক্লেয়ার। বল তার ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক ইরফানের পায়ে লেগে ক্যাচ ওঠে শাহাদাতের হাতে। জোড়া সাফল্যে জাগে স্বাগতিকদের জয়ের সম্ভাবনা। তখনও ৪০ রান দূরে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু জশুয়ার সঙ্গে জর্ডানের মারমুখী জুটিতে স্রেফ ৬.৫ ওভারেই তা করে ফেলে সফরকারীরা।
শেষ সেশনে নাঈম হাসানের পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন জশুয়া। অধিনায়ক খেলেন ৭ চার ও ১ ছয়ে ৫৪ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। ২ চার ও ১ ছয়ে ২০ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন জর্ডান।