বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক : আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন। বৃহস্পতিবারের ভোটে নির্ধারিত হবে কে হচ্ছেন আগামী দিনের নগরপিতা। দিনশেষে জানা যাবে কারা হচ্ছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর।
মেয়র পদে প্রার্থী আটজন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের মধ্যে। এ নির্বাচনে আজমত উল্লা খান দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ এবং জায়েদা খাতুন ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
স্থানীয়রা জানান, এবারের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ কম থাকলেও আছে চাপা আতঙ্ক। ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। প্রতি কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা। গাসিক নির্বাচনে ৪৮০ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। ৯ মে থেকে টানা ১৫ দিন প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা।
প্রচারের শেষ দিনে মেয়র প্রার্থীদের কেউই শোডাউন বা বড় ধরনের জনসমাগম করেননি। প্রধান দুই মেয়রপ্রার্থী আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুন অনেকটাই নীরব প্রচার চালান। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিনকে দিনভর প্রচার চালাতে দেখা গেছে।
অপরদিকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও কোথাও জনসমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভোটের ব্যালটে নৌকা ও টেবিল ঘড়ি প্রতীক থাকলেও নির্বাচনি মাঠে বাস্তবে আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তিনি মাকে নিয়ে এ নির্বাচনে লড়ছেন। মায়ের মাধ্যমে নিজের জনপ্রিয়তার জানান দিতে চাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। যদিও জায়েদা খাতুন জীবনে প্রথমবার নির্বাচন করছেন। রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল না।
অপরদিকে আজমত উল্লা খান সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবারের মেয়র ছিলেন। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পর্যবেক্ষক মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ নিয়ে তৃতীয়বার নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম দুই নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন নিয়ে মানুষের উৎসাহ কম। অনেকের মধ্যে আছে চাপা আতঙ্ক। এর কারণ হিসাবে তারা জানান, এই প্রথম বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হচ্ছে। দলটির ২৯ জন নেতা কাউন্সিলর পদে ভোট করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটির নেতাকর্মীরা তাই প্রকাশ্যে মাঠে নামেননি। অপরদিকে আজমত উল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিতে একই ঘরানার হওয়ায় তাদের নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। আজমত উল্লা খান নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারলেও জায়েদা খাতুনের প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির যুগান্তরকে বলেন, আমারা বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারছি যে যারা দীর্ঘদিন গাজীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা, তারা এই নির্বাচন নিয়ে নির্লিপ্ত। তবে ভাসমান ভোটারদের মধ্যে আগের চেয়ে গত এক সপ্তাহে আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ভোটের দিন কী যেন হয়। ২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে কি না, সেই আশঙ্কাও আছে। এছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। শ্রমিকপ্রবণ এই এলাকার মানুষ ইভিএমে ভোট দিতে অভ্যস্ত নন। শিশির বলেন, এ নির্বাচনে বিরোধী দল অনুপস্থিত। সরকারি দলের প্রার্থী একচেটিয়া প্রচার চালিয়েছেন। অন্যদের প্রচার তেমন চোখে পড়েনি।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ও সন্তোষজনক রয়েছে বলে দাবি করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। নির্বাচনি মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও আছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬-১৭ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।