শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
তাড়াশ প্রতিনিধি: তাড়াশ উপজেলায় চলতি মৌসুমে অনেক কৃষক পাটের চাষ করেছেন, ভাল ফলনের আশা করছেন তারা। এক সময়ের সেনালী আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়, এক সময়ে বাংলাদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল ছিল পাট। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলার মাঠগুলোতে ব্যাপক ভাবে চাষ হতেি পাটের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পাট চাষ বহুলাংশে কমে গেছে মনে করছেন অনেকে। পাট চাষ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদন ও পরিশ্রম বেশি, জাগ দেয়ার (পঁচানো) জায়গার অভাব এবং নায্য মূল্য না পাওয়া। এসব কারণে প্রতি বছর কমছে পাট চাষ। চাষিরা এখন পাটের পরিবর্তে সবজির দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন কৃষকরা পাটের নায্য দাম পেলে এবং পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে পাটের সোনালী দিন আবারও ফিরে আসবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ সম্পন্ন হয়েছে। বোরো ধান উঠার পর বাকিটা সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক এলাকার কৃষকরা জমিতে সেচ দিয়ে পাট বপন করেন, সেই সমস্ত পাট এখন অনেক বড় হয়েছে।
শুক্রবার উপজেলার মহেশরৌহালী, হামকুড়িয়া, চরহামকুড়িয়া, বিরলহালী, পংরৌহালী, চাকরৌহালীসহ বেশ কিছু গ্রাম এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ব্যাপক ভাবে পাট চাষ করেছেন। অনেক চাষি জমিতে সেচ দিয়ে আগাম পাট চাষ করেছেন, তাদের পাট বর্তমানে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে আবার অনেক এলাকার কৃষক বৃষ্টির পরই পাট বপন করেছেন। কৃষকরা পাটের ভাল ফলনের আশায় নিরালস ভাবে জমিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার মহেশরৌহালী গ্রামের চাষি আরমান হোসেন, শরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে তারা ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এমন এক সময় ছিল কৃষকরা শুধুই পাটের চাষই করতেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে পাটচাষ অনেক কমে গেছে। আমাদের এলাকাতে পাট জাগ দেয়ার তেমন কোন সমস্যা না হলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাজার দর কমে যাওয়ায় পাট চাষ কমে যায়।
পাশাপোল গ্রামের চাষি শিমুল হোসেন বলেন, পাটের আবাদ করার পর বড় সমস্যা হলো পাট জাগ দেয়ার জায়গা না থাকা এবং পুকুর, খাল বা নদে পানি না থাকা। গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম এই সমস্যার কারনে এ বছর ১ বিঘা জমিতে পাট ও ১ বিঘা জমিতে পটলের চাষ করেছি।
কৃষকরা বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে এ এলাকার চাষিরা পাট চাষ কিছুটা বৃদ্ধি করেছেন। বর্তমানে পাটের বাজার দর তুলনা মূলক ভালো থাকার কারনে কৃষক ধীরে ধীরে পাট চাষে ঝুকছেন।
এছাড়া পাটখড়ি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, জ্বালানি হিসেবে এখন আর তেমন কদর না থাকলেও মাঠে পটল, উচ্চে, বরবটিসহ নানা ফসলের মাচা করতে পাটখড়ির কদর বেড়েছে।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলায় পাট চাষের ইতিহাস সুপ্রাচীন। তবে সর্বপ্রথম পৃথিবীর কোথায় কি ভাবে পাটের উৎপত্তি ও পাট চাষের প্রচলন শুরু হয় এবং বাংলা তথা ভারতবর্ষে প্রথম কিভাবে পাটের আগমন ঘটে তা সঠিকভাবে যানা যায়নি। তবে যতদুর জানা যায় খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর শুরুতে মিশরে পাটের চাষ আরম্ভ হয় এবং সেখানে পাট ’মেলোকিচ’ নামে পরিচিত ছিল। এরপর চীন দেশে পাটের ব্যাপক চাষ শুরু হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনুর রশিদ বলেন, তাড়াশে প্রতিটি এলাকায় পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। নানা কারনে কৃষক পাট চাষ না করে সবজিসহ অন্যান্য চাষে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমান বাজারদর খুবই ভাল থাকায় কৃষক পাট চাষে ঝুকছেন আমরাও তাদেরকে নানা ভাবে উৎসাহী করছি।