রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার :
আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হয়েছেন আখতার আহমেদ বাচ্চু। মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু লড়বেন তাঁর নিজ ওয়ার্ডেই। প্রথমবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া এই প্রার্থীর সাথে কথা হয়েছে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির। দৈনিক সানশাইনের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো;
গতানুগতিক ধারার বাইরে প্রথমেই একটা প্রশ্ন করি, সকলেইতো নির্বাচনের আগে বহু প্রতিশ্রুতি দেয়, নির্বাচিত হলেই অনেক প্রার্থী প্রায় ভুলেও যায়, আপনার ক্ষেত্রেও কি এমনটা হবে?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, আমি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছি, যারা রাজনীতি ও মানুষের পেছনে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছে, আমিও তাই করেছি, করছি। মানবসেবা আমাদের কাছে ব্যবসা বা পেশা নয়, এটি আমার ও আমার পরিবারের মানুষদের কাছে নেশা। আর তাছাড়া, আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ্, তা আমাদের কয়েক প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট। অর্থের লোভে মানুষ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। আমার বা আমার পরিবারের সে লোভটা-ই যে নেই। আমি সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি ও মানবসেবা করেছি, কোনদিনও রাজনীতি ও মানুষকে বিক্রি করে সম্পদ গড়ার চেষ্টা করিনি।
প্রথমবারের মত কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন ,আশা কি করছেন ?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: আলহামদুলিল্লাহ্। একমাত্র মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনস্থির করেছি, ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ইনশাআল্লাহ্, নির্বাচন করবো।
হঠাৎ কাউন্সিলর হতে চাওয়া কেন?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: সত্যি বলতে, ২০১৪ সালের পর থেকেই দেখছি আমাদের ২৬নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা সবসময়ই সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিক থেকে অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যদিও অন্যান্য ওয়ার্ডের ন্যায় এই ওয়ার্ডেও সরকারি সুযোগ সুবিধার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আমাদের মেয়র সাহেব। কিন্তু স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি, অদূরদর্শিতা ও গাফিলতির কারনে এর সুফল আর সবার কাছে পৌছায় না। ফলে ওয়ার্ডের একটি বড় জনগোষ্ঠী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে। আমি নিজে চেষ্টা করেছি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু সত্যি বলতে তা তাদের চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। তারা যখন আমার কাছে এসে তাদের চাহিদা মত সাহযোগিতা না পেয়ে ফিরে যায়, সত্যি বলতে তখন মনটা কেঁদে ওঠে! খুব খারাপ লাগে। মূলত এসব কিছু বিবেচনা করেই কাউন্সিলর হতে চাওয়া! আমি সবার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি তুলে দিতে চাই।
আপনি তো আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথেও জড়িত!
আখতার আহমেদ বাচ্চু: হুম, শিশুকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু’র আদর্শকে লালিত পালিত হতে দেখেছি আমার বাড়িতে। আমার বাবা চাচা বড় ভাই সকলেই আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁদের দেখেই বঙ্গবন্ধুকে জানার চেষ্টা করেছি সবসময়। তাঁদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর মানসিকতার গল্প শুনে মুগ্ধ হয়েছি, সেই মুগ্ধতা থেকেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক মতো হওয়ার চেষ্টা করেছি। ন্যায্য দাবি আদায়ে সাধারণ মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সর্বস্ব বিলিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি।
শোনা যায়, এই অঞ্চলে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ভ্যানগার্ড হিসাবে পরিচিত আপনি। তিনি আবারও মেয়র প্রার্থী। তাঁর নির্বাচন না করে নিজেই নির্বাচন করছেন, মেয়র নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে এটার প্রভাব পড়বে কি না?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: অবশ্যই প্রভাব পড়তো, কিন্তু আমি পড়তে দিবোনা। কারন আমি আমার জীবনের চেয়েও আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আপা এবং লিটন ভাইকে ভালোবাসি। আমি থাকতে আমার ওয়ার্ডে নৌকা হেরে যাবে বা কম ভোট পাবে তা আমি হতে দিতে পারিনা। আমি আমার সকল নেতা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, আগে নৌকা এবং একমাত্র নৌকা। আমার ভোট করতে হবেনা কাউকে। আমি সবসময় মানুষের উপকার করেছি, তারা চাইলে আমি জিতবো। না চাইলে এই পদ আমার দরকার নেই। কিন্তু আমার প্রাণের নৌকা যেন না হারে। প্রয়োজনে প্রতিটি মানুষকে বারবার, হাজার বার লিটন ভাইয়ের অতীত অবদান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বোঝাতে হবে, তাঁকে বিজয়ী করে আনতেই হবে।
শিক্ষিত মানুষ আপনি, বিএ, এলএলবি’র মত ডিগ্রী আপনার নামের পাশে, আপনার দলও ক্ষমতায়, চাইলে তো চাকরীও করতে পারতেন!
আখতার আহমেদ বাচ্চু: হুম, চাকরী করতে পারতাম। আমার সন্তানরাও বড় হচ্ছে, তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চাকরি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কেন জানি মন সাড়া দেয়না। হয়তো রক্তই সাড়া দেয়না। আমার বাবা ভাই সারাজীবন সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, হয়তো আমাকেও সে পথটাই টানে! বর্তমানে আমি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি, আর এই পরিচয়টিতেই আমার বেশি গর্ববোধ হয়।
কাউন্সিলর হতে পারলে কি উপহার দিবেন ওয়ার্ডবাসীকে?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: আমি প্রথমেই বলেছি, আমার ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সরকারি সুযোগ সুবিধার সরবরাহ রয়েছে। এখানে যেটার অভাব, সেটা হলো সেগুলোর সুষম বন্টন। আমি চাই, যার যা প্রাপ্য, সে যেন সেটা সব সময় বুঝে পায়। খেয়াল করলে দেখবেন, সমাজে দুই ধরনের রাজনীতিবিদ রয়েছে, এক ধরনের রাজনীতিবিদ নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয় রাজনীতি তথা মানুষের জন্য, আরেক ধরনের রাজনীতিবিদ রাজনীতি তথা মানুষকে বিক্রি করে নিজেরাই সর্বস্ব গড়ে! আমি প্রথম দলের মানুষ। আমি সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত মানুষের জন্য। যেকোন সমস্যা নিয়ে যে কেউ আমার কাছে যেকোন সময় আসতে পারে। কোন পদ পদবীতে না থেকেও আমি যেমন তাদের জন্য করে গেছি, ঠিক তেমন ভাবেই সবকিছু করে যাবো।
জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: ইনশাআল্লাহ্, সাধারণ মানুষ আমাকে নিয়ে অনেক ইতিবাচক। তারা আমার কাজ ভালোবেসে আমাকে গ্রহন করেছে। তাছাড়া স্থানীয় যুব সমাজ আমাকে ভালোবেসে আমার জন্য স্বেচ্ছা শ্রম দিচ্ছে। তাই বিজয়ের ব্যাপরে আমি আশাবাদী।
স্থানীয় যুব সমাজ কেন আপনাকে এত ভালোবাসে?
আখতার আহমেদ বাচ্চু : সত্যি বলতে আমাদের এই ওয়ার্ডের যুবকরা বেশ খেলা পাগল। তারা সবসময় খেলাধুলা নিয়ে বেশ আগ্রহী। কিন্তু বর্তমান কাউন্সিলর তাদের খেলাধুলা নিয়ে খুবই উদাসীন। তরুণরা কাউন্সিলরের সাহযোগিতা না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে যখনই এসেছে, আমি তাদের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পুরস্কার কিনতে বা মাঠের পরিচর্যার জন্য যত অর্থই ব্যয় হোক না কেন, আমি নিজে তা দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন বিশেষ দিবসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে আমি সবসময় তাদের পাশে থেকে সাহযোগিতা করেছি।
ধর্ম প্রচার এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিষয়ে আপনার মনোভাব:
আখতার আহমেদ বাচ্চু: আমি নিজে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমার মেয়ে ও পরিবারের সকলের পাশাপাশি সমাজের মানুষদেরও নামাজের বিষয়ে আমি উৎসাহী করে তুলেছি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে যে কেউ ওয়াজ মাহফিলের কথা বললে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ইসলামের সেবায় আমি সদা প্রস্তুত। মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, জালসা, দরিদ্র এতিম হাফেজদের পড়ালেখা, যেকোন বিষয়ে আমাকে একবার বললেই আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধ্যমত সর্বোচ্চ চেষ্টা করি পাশে দাঁড়ানোর। ইনশাআল্লাহ, যতদিন বেঁচে থাকবো ইসলামের খেদমত করে যাবো। অন্য ধর্ম ও ধর্মের মানুষকে সম্মান বা তাদের সাহযোগিতার বিষয়েও আমি সবসময়ই সচেতন ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।
ওয়ার্ডের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: আপনি হয়তো দেখেছেন, আমাদের ওয়ার্ডের রাস্তাগুলোর সংস্কার অতি জরুরি! গ্যাস সংযোগ ও অন্যান্য কারনে রাস্তা খননের ফলে রাস্তাগুলোর এমন বেহাল দশা বহুদিন ধরে! কিন্তু রাস্তাগুলোর অবস্থার একটুও উন্নতি হলোনা। আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলোর সংস্কার করতে চাই। এছাড়া এখানে নতুন বাড়ীঘর নির্মান করা অনেকেই আমার রাজনৈতিক পরিচয় জেনে আমাকে রাস্তা ও ড্রেনের কথা বলে আসছে অনেকদিন ধরেই। আমি নিজে মেয়র সাহেবকে সব বলেছি। আশা করি আমি নির্বাচিত হলেই এই সব কাজগুলো শুরু করবো। এছাড়া আমাদের ওয়ার্ডে মশার উপদ্রবে জনসাধারণ অতিষ্ঠ! সে বিষয়টি নিয়েও আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমান কাউন্সিলরকে না বলে নতুন রাস্তা বা ড্র্রেনের বিষয়ে কেন তারা আপনাকে বলছে?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: তারা বহুদিন ধরে এসব বিষয় নিয়ে কাউন্সিলরের সাথে কথা বলে আশানুরূপ ফল না পেয়েই আমার কাছে এসেছে। মূলত আমার মাধ্যমে তারা মেয়র সাহেবের কাছে তাদের দাবী দাওয়া পৌছে দিতে চেয়েছে।
যুব সমাজ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আখতার আহমেদ বাচ্চু: যুব সমাজ একটি দেশের প্রাণ। তাঁদের নিয়ে আমার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আমি নির্বাচনে জয়লাভ করি বা না করি, সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আমি করবো, ইনশাআল্লাহ্। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের ওয়ার্ডের অবস্থান হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে এই ওয়ার্ডটির মানুষ বেশ উদাসীন। যা মাঝে মাঝে আমকে ভীত করে তোলে। কারন শিক্ষা ছাড়া যে সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। আমি সকলকে নিয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই। সকলকে শিক্ষামুখী করতে চাই। কি কারনে তারা শিক্ষা বিমুখ তা খুঁজে বের করে সমাধান করতে চাই। আমার বহুদিনের ইচ্ছা, আমি আমার ওয়ার্ডের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করবো, যার নাম দিবো “বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি”। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে শিক্ষার যে কোন বিকল্প নেই! এছাড়া যে মাঠগুলোতে আমাদের যুবকরা খেলে, সে মাঠগুলো সংস্কারের মাধ্যমে আরো খেলার উপযোগী করতে চাই। সারাবছর যেন তারা খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারে তা নিশ্চিত করতে চাই। কারন যুবকরা যতবেশি খেলার মাঠে থাকবে, ততই ওরা মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে বিরত থাকবে।
ওয়ার্ডবাসীর কর্মসংস্থান ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলুন:
আখতার আহমেদ বাচ্চু: ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন, লিটন ভাই পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে এবার কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর গুরুত্বআরোপ করবেন। আমি ভাইয়ের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। ওয়ার্ডের বড় একটি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করবো।
সানশাইন / শামি