শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া মাঠে কারো কোনো তৎপরতা নাই। রাজশাহী শহরজুড়ে এখন কেবলই লিটনের প্রচার।
তফসিল ঘোষণার পর এখানে আওয়ামী লীগের পর দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। আর সর্বশেষ বৃহস্পত্বিার জাতীয় পার্টিও রাজশাহী সিটিতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম ফারুকীকে প্রকাশ্যে দেখা যায় নি। দলটির নেতাকর্মীদের দাবি তাদের তৎপরতা অনলাইনে শুরু হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। রাজশাহী সিটিতে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর নাম সাইফুল ইসলাম স্বপন। সাংগাঠনিকভাবে তিনি রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির অহ্বায়ক। তবে কর্মীর অভাব ও দলীয় ভীত নড়বড়ে হওয়ায় তিনিও আপাতত চুপ রয়েছেন। এখনো মাঠে দেখা যায়নি জাপার এ মেয়র প্রার্থীকে। রাজশাহী নগরবাসীর কাছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রাথী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুজনই অপরিচিত। রাজনৈতিকভাবে এ শহরে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। মাঠেও তারা অস্তিত্বহীণ।
এদিকে বিএনপি শুরু থেকেই প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে বিএনপি নেতা ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই সাঈদ হাসানকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিএনপির আড়ালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাঈদ হাসান মেয়র পদে লড়তে পারেন বলে জানা গেছে। সাঈদ হাসান সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রার্থীতার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন তাদের কোনো প্রার্থী নেই। আর সাঈদ হাসান এখন বিএনপির কোনো কমিটিতে নাই। সাঈদ হাসানের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘সাঈদ তো বিএনপির কমিটিতে নেই। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। সাঈদ প্রার্থী হলেও আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা তো ভোটই দিতে যাব না।’
সিটি নির্বাচনে রাজশাহীতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া তিনজনের মধ্যে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত নানাভাবে নির্বাচনী কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এদিকে, বিএনপি এ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দিবে না বলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেও হঠাৎ তৃতীয় সারির নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই ও সাবেক যুবদল নেতা সাইদ হাসানকে নিয়েই গুঞ্জন চলছে। সাঈদ হাসান বলেন, তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। টোটাল পরিস্থিতি তিনি পর্যবেক্ষন করছেন। অনুুকুল পরিস্থিতি মনে হলে ভোটের মাঠে থাকতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইদ হাসান বিএনপির আমলে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি হাতালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি রয়েছেন নীরবভ দলেও কোনো অস্তিত্ব নেই তার। খোদ বিএনপি নেতারা বলছে সাঈদ হাসান সুবিধাবাদি। তিনিই হঠাৎ করে রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনার পরে দলের নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
সাইদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, ‘এখনো তো অনেক সময় আছে, সময় হলেই সবকিছু জানতে পারবেন। তখন সবকিছু বলবো। সুবিধাবাদি হিসেবে বিএনপিতে পরিচিত সাইদের কথার মধ্যেও রয়ে গেছে রহস্যেঘেরা। তিনি কি আদৌ নির্বাচনে করবেন, নাকি শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াবানে, নাকি নির্বাচনে নেমে সুবিধা নিবেন-এমন কথাও আসছে লোকমুখে।
এখন পর্যন্ত মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়ায় একমাত্র বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে যাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। ফলে হাতে যে কয়দিন সময় আছে, তাতে শেষ মহূর্তে গিয়ে বিএনপির কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতা এ নির্বাচনে আসলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটনকে তেমন বেগ পেতে হবে না বলেই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
রাজশাহী বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাঈদ হাসান দীর্ঘদিন দলের বাইরে। নেতাকর্মীদের খোঁজ নেননি। জানা গেছে, সাঈদ রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন তিনি। পরে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি হন। সর্বশেষ ২০১১ সালের দিকে মহানগর বিএনপির যে কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনু সভাপতি ও শফিকুল হক মিলন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সেই কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন সাঈদ। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সাঈদ এখন রাজনীতিতে নিষ্কিয়।
নাদিমের ভাই সাঈদ রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়বেন, নগরে এমন আলোচনা কয়েক দিন ধরেই চলছিল। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের একাংশ কৌশলে সাঈদকে প্রার্থী করছে বলেও আলোচনা রয়েছে।
তবে এসব নিয়ে মোটেও ভাবছে না আওয়ামী লীগ। সাধারণ মানুষও এদের চিনে না। তাই জয়ের ব্যাপারে তারা যে বাণী শোনাচ্ছেন তা শুরু কথার কথা।
রাজশাহী নগরের সাধালণ ভোটাররা বলছেন ‘মেয়র তো এবারও লিটনই হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে। তার উন্নয়নের কাছে অস্তিত্বহীন অন্য প্রার্থীরা টিকবে না। লিটনের উন্নয়ন তাঁকে এগিয়ে রেখেছে বেশি। যার কারণে এই প্রথম মেয়র পদে ভোটের নিরুত্তাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এর আগে প্রতিটি নির্বাচনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।
নগরীর উপশহর এলাকার একজন ভোটার বলেন, ‘এবার নির্বাচনের চিত্র পুরোটা ভিন্ন। এখন বেশি আলোচনা হতো মেয়র পদ নিয়ে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, আমরা পুরো নগরে আমাদের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করেছি। ফলে বিএনপি বা যে দলেরই প্রার্থী আসুক না কেন, আমরা সেটিকে পজেটিভবাবে নিয়ে লড়াই করে জিততে চাই।