শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: বড়াইগ্রামে শিক্ষাবর্ষের চার মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থীর হাতেই এখনও পাঠ্যবই পৌঁছেনি। বিশেষ করে ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখনও অর্ধেকের বেশি বই পায়নি।
অপরদিকে, মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা রমজানের ছুটির মাত্র কয়েক দিন আগে অর্ধেক বিষয়ের বই পেয়েছে। বই না পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এছাড়া যেসব বই বিতরণ করা হয়েছে সেগুলোর বাঁধাই, ছাপা ও কাগজ নিম্নমানের বলে জানা গেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৮টি দাখিল মাদরাসার ২৭ হাজার ১৩৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মোট বইয়ের চাহিদা ছিলো চার লাখ ১০ হাজার ৩৩২ টি। তার মধ্যে বই উৎসবের আগে মাধ্যমিকের ২৭ শতাংশ ও মাদরাসার ৫৫ শতাংশ বই পৌঁছে।
পরবর্তীতে অন্য শ্রেণির বই এলেও স্কুল ও মাদরাসার নবম শ্রেণির এখনও ৪৯ হাজার বই পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে মাধ্যমিক স্কুলের ইংরেজি প্রথম পত্র, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, পৌরনীতি, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এবং হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বই এখনও পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, মাদরাসার ৯ম শ্রেণির ইংরেজি ২য় পত্র, বাংলা রচনা, বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয়, শারীরিক শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, হাদিস শরীফ, আকাইদ ফিকাহ এবং আরবী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র বই এখনও পায়নি শিক্ষার্থীরা। তবে দেরিতে হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবাইকে বই দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ফাইজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
উপজেলার রয়না ভরট সরকার বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাহানারা খাতুন জানান, আমি নবম শ্রেণির ইতিহাস পড়াই। কিন্তু এ বিষয়ের কোন বই আমরা পাইনি। শিক্ষার্থীদের মাত্র দুজন পুরাতন দুটি বই নিজের চেষ্টায় সংগ্রহ করেছে। সেটা থেকে ফটোস্ট্যাট করে বা বোর্ডে লিখে দিয়ে ক্লাশ নিয়েছি।
এভাবে নিয়মিত ক্লাশ নিলেও সবার হাতে বই না থাকায় শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পড়া করতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যে ক্ষতি হলো তা পোষানো কঠিন হবে।
আহম্মেদপুর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া মানিক বলেন, আমাদের স্কুলে বছরের শুরুতে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৫টি বিষয়ের বই পেলেও ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির কোন বই ছিলো না। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্লাশের সব বই পেলেও ৯ম শ্রেণির এখনও আটটি বিষয়ের বই পাইনি। এতে যথাযথ পাঠদান বিঘ্ন হচ্ছে। দ্বারিকুশী-প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামসহ আরো কমপক্ষে পাঁচজন প্রধান শিক্ষক অনুরুপ কথা বলেন।
এদিকে, কুমারখালি আহম্মদিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আহমদুল্লাহ জানান, বছরের শুরুতে ৯ম শ্রেণির কোন বই পাইনি। মার্চের মাঝামাঝিতে এসে আটটি করে বই পেয়েছি। এখনও আরো ৯টি করে পায়নি তারা।
বনপাড়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বছরের চার মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দেয়া সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ পুরাতন বই সংগ্রহ করে বা কেউ ফটোকপি করে নিলেও এখনও এ শ্রেণীর অধিকাংশ শিক্ষার্থী অর্ধেক বই পায়নি। এতে তাদের লেখাপড়ার চরম ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, বই পাওয়া মাত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।