বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিক্ষকের মৃত্যুতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এম রেজাউল হক নামের ওই শিক্ষক ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার আলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
তবে দীর্ঘ ছয়মাস তিনি ছুটি অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় শেষঅব্দি তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। ফলে খানিকটা আর্থিক টানাপোড়েন নিয়েই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শিক্ষক রেজাউল হক মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বিলকরিল্যা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুটি শিশু সন্তান রেখে গেছেন।
শিক্ষক রেজাউল হকের স্ত্রী পান্না খাতুন জানান, দীর্ঘ ছয়মাসের বেশি সময় ধরে তাঁর স্বামী হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। চিকিৎসাধীন থাকায় মাঝে ছয়মাস তিনি স্কুলমুখো হতে পারেননি। ফলে তাঁর বেতন বন্ধ থাকায় খানিকটা অর্থকষ্টের মধ্য দিয়েই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়েছে।
কিছুটা সুস্থ হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে চাকরিতে ফিরেছিলেন তিনি। ছুটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুমাসেও নিরসন হয়নি জটিলতার।
এ অবস্থায় গত শনিবার হার্টস্ট্রোকের শিকার হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার শামসুজ্জামান এই শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক ও সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মেডিকেলের কাগজপত্র ও ছুটির আবেদন ছাড়াই প্রধান শিক্ষক এম রেজাউল হক ছয়মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। একারণে তাঁর বেতন-ভাতা সাময়িক স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে কাগজপত্র উপস্থাপন করায় তা অনুমোদনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। ছুটি অনুমোদন ছাড়া তাঁর বিদ্যালয়ে যোগদান ও বেতন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা ছিল।
তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি যেদিন মারা যান, সেদিনই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা শেষে বিদ্যালয়ে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা হয় বলেও জানান তিনি।
মান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ জানান, শিক্ষক এম রেজাউল হক অনেকদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভূগছিলেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করার পর তা পরিশোধ করতে না পেরে মানষিক চাপে বেশ কিছুদিন থেকে হার্টের অসুখে পড়েন।
তার মৃত্যুতে উপজেলা শিক্ষক সমাজে শোকের ছায়া পড়েছে। আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।