জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন : আলোচিত জেম হত্যায় ৫ আসামির স্বীকারোক্তি

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলোচিত যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেম (৪৮) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক হুমায়ন কবীরের কাছে ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তি দেওয়া পাঁচ আসামি হলেন, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হক (৪২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার মাসুদ রানা (৩৮), ইব্রাহিম ওরফে দাউদ ইব্রাহিম (৩২), হুজরাপুর রেলবাগান মহল্লার শামীম রেজা (৩৫) ও প্রান্তিক পাড়া মহল্লার মিলন হোসেন (৩০)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করার পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বীকারোক্তি দেওয়া পাঁচ আসামি গত সোমবার থেকে তিন দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাদের দেয়া জবানবন্দি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম জেম হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এলাকাবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে মহিলা লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিনা বেগম, জেলা মহিলা লীগের দপ্তর সম্পাদক সুলেখা বেগম ও জেলা যুব মহিলা লীগের প্রচার সম্পাদক বিউটি আক্তার।
মানববন্ধনে তারা বলেন, শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কারা তাকে হত্যা করেছে তা সবাই জানে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। অবিলম্বে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খাইরুল আলম জেম নিহত হন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দনা গ্রামে হলেও তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নয়াগোলা এলাকায় বসবাস করতেন।
জেম হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য মোখলেসুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের গত উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী সামিউল হক লিটনসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন নিহত ব্যক্তির ভাই মনিরুল ইসলাম। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নিহত খাইরুল আলম জেম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে খুন পাল্টা খুন, বোমাবাজি, প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধে জেমের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। এলাকায় মোমারু জেম নামে পরিচিত খাইরুল আলম জেম সাইফুদ্দিন আহমেদ সাফু হত্যার মুলহোতা ছিলেন। ২০২০ সালের ১৪ জুন জেম ও তার ক্যাডার বাহিনী সাফুকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এছাড়াও শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সালামের সঙ্গে জেমের দুই যুগের বেশী সময় ধরে রেষারেষি চলে আসছিল। বছর দুয়েক আগে সাফু খুন ও সালাম মারা যাওয়ার পর জেম নিজ এলাকা ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আশ্রয় নেন। খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের শেল্টারে ছিলেন।
সূত্রমতে, জেম নিজ এলাকা ছেড়ে শহরে আসলেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ত্যাগ করতে পারেননি। এমপির প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গড় তোলেন নিজস্ব বাহিনী। গত ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে হওয়া উপ-নির্বাচনের আগে ও পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আধিপত্য বিস্তারে এসব ঘটনান নেতৃত্বে ছিলেন জেম।
এছাড়াও গত ৫ ডিসেম্বর পৌরসভা পার্ক মাঠে জেলা কৃষক লীগের সম্মেলনে ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এমপি ও মেয়র অনুসারীদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের সময় বোমাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন জেম। এসবকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে পোস্ট ও পাল্টা হুমকিমূলক পোস্ট দিতেন জেম। খুন হওয়ার একদিন আগে জেম হুমকি দিয়ে ফেসবুকে একটি লাইভ করেন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ