শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
তাড়াশ প্রতিনিধি: বাঙ্গি এক রকমের শসাজাতীয় ফল। এর অন্য নাম খরমুজ, কাঁকুর, ফুটি বা বানি। দেশের প্রায় সব এলাকায় গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। শরীর ঠাণ্ডা রাখতে তরমুজের পর বাঙ্গি দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে। বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসাগাছের মতো, লতানো।
বাঙ্গি খাবার ফল হয়ে ওঠার ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ইতিহাসবিদদের মতে, তরমুজ গোত্রীয় এই ফলের আদিনিবাস আফ্রিকা। অনেকের মতে, ভারত কিংবা চীন থেকে ফলটি আফ্রিকায় নেওয়া হয়।
বাঙ্গি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে, যা অনেকে সবজি হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকে। এই ফল পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। পাকা ফলের সুমিষ্ট সৌরভের কারণে এর সুখ্যাতি আছে। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি ফেটে যায়। এই ফলের ওজন এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটি চাষের খরচ তুলনামূলক কম, আয় বেশি। তাই চাষিরা বাঙ্গি চাষে বেশ আগ্রহী।
বাংলাদেশে প্রধানত বেলে ও এঁটেল এই দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত ও তুলনামূলক বেশি মিষ্টি।
জাতভেদে বাংলা সনের কার্তিকের মাঝামাঝি অর্থাৎ নভেম্বরে বপন করা হয় বাঙ্গির বীজ। মাঘের শেষ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষে ফলের দেখা মেলে। এ গাছের আয়ুষ্কাল খুবই কম। ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তোলা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাড়াশ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী নওগাঁর হাটে বাঙ্গি ও কাকুর বেঁচা কেনার ধুম পরেছে। আশে পাশের বাজার গুলোতেও প্রচুর পরিমানে এই ফলের আমদানি রয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী নওগাঁর হাটের বাঙ্গি ও কাকুর বিক্রেতা সামছু উদ্দিনকে দামের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এই ফল এখন বাজারে ভরপুর, তাই দাম খুব কম, ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা ৩০ টাকা ৪০ টাকা ও প্রকার ভেদে ৬০ টাকা পযর্ন্ত বিক্রি করেছি।
তিনি আরও জানান প্রচন্ড তাপদহে কারণে আমরা কাকুর বাঙ্গি ঘরে রাখতে পারি না অতি সহজে পেকে পঁচে যায় তাতে আমাদের প্রচুর লোকসান হয়ে যায়।
বাঙ্গি সবচেয়ে বেশি যে রোগে আক্রান্ত হয়, সেটি হোয়াইট মোল্ড। ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগটি হয়।
এ ছাড়া কাঁঠাল পোকা, থ্রিপস পোকা, ব্ল্যাক রট ও লিফ কার্ল রোগে বাঙ্গি আক্রান্ত হয়। ভালো ফলনের জন্য জমিতে নিয়মিত পানি, ডিআইবি, টিএসপি ও পটাশ সার এবং পোকামাকড় মারার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
বাঙ্গি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি উপকারী ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মানবদেহ, বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপকারী।
এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দাসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে। বাঙ্গি আমাদের দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতেও বাঙ্গি সাহায্য করে থাকে।