রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক : চৈত্রের শেষে মাঝারি থেকে তীব্র রূপ নেওয়া তাপপ্রবাহ সপ্তাহখানেক ভুগিয়ে কমে এসেছিল গত শুক্র ও শনিবারের বৃষ্টিতে। সেই তাপপ্রবাহ আবারও ফিরেছে।
খুব দ্রুত তা কমার আভাস দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর; উল্টো দিচ্ছে বিস্তারের পূর্বাভাস। আর এর মধ্যে বৃষ্টি যে স্বস্তি আনবে, তেমন আভাসও নেই।
বুধবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনী, পটুয়াখালী জেলার উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু চলবেই না, দেশের আরও নতুন এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অফিস।
এ বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিলে তীব্র তাপদাহে ভুগেছে দেশ। টানা কিছুদিন দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের পর বর্তমানে তা বয়ে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে।
মঙ্গলবার বান্দরবান জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আগের দিন সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে কক্সবাজারে ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপপ্রবাহ ফিরে আসার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ বলেন, “কিছুদিন আগে যে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, তার কারণ ছিল আকাশে মেঘ না থাকা, দেশের কোথাও বৃষ্টি না হওয়া। কিন্তু মাঝে আকাশে মেঘ জমে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হওয়াতে তাপমাত্রা কমে আসে। কিন্তু এখন আবার আকাশে মেঘ নেই, যে কারণে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।”
ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ বলেন, “টানা কয়েকদিন চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী অঞ্চলে তাপপ্রবাহ পাওয়াটা একটা লম্বা সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক ছিল। এখন যেমন একেকদিন একেক জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক।
“দেশের পশ্চিমাঞ্চলে মেঘ জমলেও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মেঘ জমছে না, এ কারণে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটা সামনের দিনে ঝড়ের আভাস কি না বা এর কারণে আবহাওয়ার মোড় পরিবর্তন হবে কি না, তা আর ও দুই-তিনদিন দেখার পর বোঝা যাবে।”
বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টি নামবে কি না এই প্রশ্নে সুখকর খবর দিতে পারেননি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদও। তিনি বলেন, “আবহাওয়ার যে অবস্থা, তাতে কোথাও কোথাও খুবই অল্প মাত্রায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে তা তাপপ্রবাহে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনবে না।”
গত ১৭ এপ্রিল টানা দুই সপ্তাহের চলমান তাপপ্রবাহে পাঁচ দশকের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর দুদিন আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। তারও আগে ১৯৯৫ সালে এবং ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়ামে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ।