রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী অঞ্চলে টানা ১৮ দিন দাবদাহের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস। এই বৃষ্টিতে আম ও ধানের খুব উপকার হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
এর আগে গত ২ এপ্রিল রাজশাহীতে ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তারপর আর বৃষ্টির হয়নি। ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। মৃদু, মাঝারি, তীব্র হয়ে অতি তীব্র পর্যন্ত ওঠে তাপপ্রবাহ। গত ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর পরের দুই দিনও তাপমাত্রা থাকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। এই অতি তীব্র তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে ওঠেন রাজশাহীর মানুষ। ঝরে পড়তে শুরু করে গাছের আম আর লিচু। পুড়তে শুরু করে মাঠের ধানগাছ। এক পশলা বৃষ্টির জন্য গত রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন তারা।
তবে আচমকা গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে। সেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৪ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ দিন রাজশাহীর তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছিলো। অর্থাৎ টানা ১৮ দিন রাজশাহীতে মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
এ অবস্থায় সোমবার সামান্য বেড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ দিনই আকাশ থেকে নামে স্বস্তির বৃষ্টি। খরতাপে পোড়ার পর বৃষ্টির কারণে শীতল হয়েছে রাজশাহীর আবহাওয়া। বয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। বৃষ্টির কারণে রাজশাহীর পথঘাটের ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রকৃতিতে ফিরেছে সতেজতা। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার রোদ উঠলেও স্বস্তি বিরাজ করছে জনজীবনে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, সোমবার বৃষ্টি শুরুর আগে বিকেলে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪ থেকে ১৬ কিলোমিটার। এরপর ৫টা ৪৫ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এই বৃষ্টি কৃষির জন্য খুব উপকার হলো। জেলার ৯ উপজেলা ও মহানগরের মধ্যে শুধু চারঘাটে সামান্য শিলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে ক্ষতি খুব একটা হবে না। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে তারা চাষিদের সকাল-বিকেল আমগাছে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। বিকেলে গাছের ওপরেও পানি স্প্রে করতে বলা হচ্ছিল। এখন বৃষ্টির কারণে আগামী এক সপ্তাহ গাছে সেচ দেওয়া লাগবে না। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে গাছের পাতার ধুলোবালি ধুয়ে গেছে। এতে সালোকসংশ্লেষণ ভালো হবে। শাক-সবজি দ্রুত বেড়ে উঠবে। মাঠে মাঠে বোরো ধানের জমিতে নিয়মিত সেচের পানি পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। এখন সব জমিতেই সেচ হয়ে গেল। আগামী কয়েক দিন ধানের জমিতেও সেচ লাগবে না। এতে চাষিরা উপকৃত হলেন।