শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগের সাবেক নেতা খাইরুল আলমের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গ থেকে খাইরুল আলমের লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে শোক মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আসেন। এরপর সেখান থেকে বেলা দুইটার দিকে শান্তির মোড়ে দলের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে খাইরুল আলমের লাশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসা হলে নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে খাইরুল আলমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ব্যানার ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা লাশের গাড়ি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করার দাবি তোলেন। একপর্যায়ে তাঁরা লাশের গাড়ির সামনে রাস্তায় বসে পড়েন। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দাবি জানাতে থাকেন, সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ, সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ যেন তাঁদের সঙ্গে অংশ নেন।
তবে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরও দুই সংসদ সদস্য তাঁদের সঙ্গে যোগ না দেওয়ায় অন্য নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ শান্তির মোড়ে এসে রাস্তায় অবস্থান নেন। সেখানে তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
অবরোধ কর্মসূচি শেষে নেতা-কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে খাইরুল আলমের প্রথম জানাজায় মিলিত হন। সেখান থেকে পৌর এলাকার নয়াগোলা মহল্লায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিকেলে খাইরুল আলমের গ্রামের বাড়ি মর্দানার উদ্দেশে লাশ নিয়ে রওনা দেয় অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।
বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত খাইরুল আলম ওরফে জেমের ওপর হামলা করে। এ সময় তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে তারা। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান। তিনি শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। খাইরুল আলম জেলা যুবলীগের সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক।
জানাজা শেষে বেলা তিনটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ঝিলিম রোডে সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদের নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, খাইরুল আলম হত্যার ঘটনায় যদি দ্রুত মামলা গ্রহণ করে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে ঈদের পরদিন থেকে লাগাতর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা। প্রয়োজনে রাস্তাঘাট অবরোধ, ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস, এসপি (পুলিশ সুপার) অফিস, থানা ঘেরাও করা হবে। হরতাল পালন করা হবে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ বলেন, খাইরুল আলম কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘নুরুল ডিআইজি (ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম) তাঁর বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এ কথাটিই তাঁর বড় অপরাধ ধরে এ অপরাধকে মুছে দিতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবদুল ওদুদ বলেন, ‘ডিআইজি নুরুল ইসলামের অত্যাচারের কারণে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার মর্দানা গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। আমরা এর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ কামনা করি।’
খাইরুল হত্যাকাণ্ডে দুজনকে আটকের বিষয়ে আবদুল ওদুদ বলেন, এটা জজমিয়া খেলা হচ্ছে। তাঁরা টোকাই-মোকাই ধরে, স্বীকারোক্তি নিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে জানাতে চান।
সংসদ সদস্য ওদুদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে বা কে কী করেছে, এ সকল নিয়ে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এই হত্যাকাণ্ড বা হত্যাকাণ্ডের পূর্বের বিষয়ে অথবা আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা কোনো ঘটনার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি কোনোটারই রিঅ্যাকশন ও রিপার্কেশন কোনোটাই করি নাই।’
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, চাক্ষুষ সকলে দেখেছে। এখন এটার পেছনে, পশ্চাতে কে আছে, কে কী করেছে, না করেছে, এটা কিন্তু তিনি বলে দিতে পারেন না। তাৎক্ষণিকভাবে যদি বলেই দেন, তাহলে ইনভেস্টিগেশনের প্রয়োজনটা কী? মাননীয় সংসদ সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে, তিনি একজন আইনপ্রণেতা, তিনি যদি এইভাবে কথাবার্তা বলেন, তাহলে এটা নিয়ে তো আমাদের প্রচণ্ড দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। নাগরিক হিসেবে যদি আমার পূর্ণ মাত্রায় স্বাধীনতা থাকত, তাহলে আমার বিরুদ্ধে এ রকম সরাসরি আঙুল তোলা বা প্রেস কনফারেন্স করা, মিডিয়ার সামনে কথা বলার তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করতাম।’
সদর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যাঁরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁরা ‘টোকাই’ শ্রেণিরই। এখন তাঁরা গ্রেপ্তার হলে জানা যাবে, তাঁদের পেছনে কোন রাঘববোয়ালরা আছেন। আজ বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে ওসি জানিয়েছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জড়িত আছেন, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা তা বলতে চাচ্ছি না।’