রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: বড়াইগ্রামে নন্দকুজা নদী এখন পুরোদস্তুর ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাব, অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণ, দখল আর নাব্য সংকটে এক সময়ের স্রোতস্বিনী নদীটি বর্তমানে বিলীনের পথে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও সেচ কাজে স্থবিরতা নেমে আসার পাশাপাশি জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপত্তি হয়ে পদ্মার শাখা বড়াল নদী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া এলাকায় এসে বনপাড়া অভিমুখে চলে গেছে। আর এখান থেকে নদীর অপর একটি ধারা নন্দকুজা নামে আহম্মেদপুর হয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে এক সময় ছোট-বড় নৌকায় করে মাঝিমাল্লা ও সওদাগররা ছুটে চলতেন।
জেলেরা মাছ ধরে আশপাশের বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথমে চারঘাটে বড়ালের উৎসমুখে এবং পরে নব্বইয়ের দশকে আটঘরিয়ায় দুটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পলি জমার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিনেও ড্রেজিং না করায় নন্দীকূজা নদী ভরাট হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কমে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শুকনো নদীর মাঝখানে ৬-৭ হাত প্রস্থের একটি পানির ধারা বহমান রয়েছে।
পানি সংকটে নদীতে মাছ না থাকায় দুই তীরে বসবাসকারী জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। মাঝিরাও জীবিকার প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়েছেন বাপ-দাদার পেশা। পানির প্রবাহ না থাকায় তীরবর্তী মানুষরা নদীর বুকে ফসলের চাষ করছেন।
স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, নদীতে এক সময় সারা বছর পানি থাকত। কৃষকেরা নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করতেন। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প দিয়ে নদীর পানি তুলে এলাকার পাঁচটি বিলে স্বল্পমূল্যে সেচ দেয়া হতো। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নদী তীরবর্তী মানুষ চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বয়োবৃদ্ধ মৎস্যজীবী আকুল মিয়া বলেন, ‘ছোটকাল থেকে এ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু এখন নদীতে পানি নেই, মাছ থাকে কি করে।’ জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, নন্দকূজা নদীর সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু নদী মরে যাওয়ায় তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই নদীটির পরিমাপ ঠিক রেখে দ্রুত পুনঃখনন দরকার।