সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার : টানা দাবদাহের পর এবার রাজশাহীতে শুরু হয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এরইমধ্য রাজশাহীতে গেল ১০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ছুয়েছে রাজশাহীকে। সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও মঙ্গলবার সামান্য কমে তাপমাত্রা বিরাজ করে ৪২ ডিগ্রিতে। তবে এখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে এই তাপপ্রবাহে ঝরে পড়ছে গাছের ছোট ছোট আম আর লিচু গুটি। পুড়ছে মাঠের ধান। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগী। মানুষের পাশাপাশি ওষ্ঠাগত প্রাণিকুলও। এ অবস্থায় আম আর লিচুর ঝরে পড়া ঠেকাতে সকাল-বিকেল দুইবেলা গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। মাঠের বোরো ধানের জমিও ভিজিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে সেচ দিয়ে। কিন্তু মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। এর ফলে সময়মত সেচের পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের হিসাবে রাজশাহীতে এ বছর ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ১৯ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে আমবাগান এবং প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আছে লিচু বাগান। সরেজমিনে দেখা গেছে, কড়ালিকাল পার করে আম ও লিচু এখন পরিণত হতে শুরু করেছে। আর মাঠে মাঠে গাছে শিষ আসতে শুরু করেছে ধানের। কোনো কোনো খেতে ধান পাকতেও শুরু করেছে। গাছের ওপরের পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় তীব্র খরায় ধানগাছের ওপরের পাতা পুড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, অন্য এলাকার তুলনায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষ করতে পানির প্রয়োজন হয় বেশি। কিন্তু এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তীব্র খরায় ধান খেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
গোদাগাড়ীর চকপাড়া গ্রামের কৃষক আল-আমিন বলেন, ‘এতই খরা পড়ছে যে আজ পানি দিলে কালকেই জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। দুই দিন পরই পানি দেওয়া উচিত। কিন্তু ১০ দিনের আগে কোনো সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে পানির সিরিয়াল পেতে দেরি হচ্ছে।
দারিয়াপুর বিলের ধানচাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নিচু জমিগুলোর ধান ভালো আছে। কিন্তু উঁচু জমির ধানে খুব সমস্যা। সময়মতো পানি দিতে না পারলে ধান হবে না, সব চিটা হয়ে যাবে।
তীব্র খরায় সমস্যার কথা জানালেন আমচাষীরাও। পবার পারিলা এলাকার আমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে প্রত্যেক থোকা থেকে আম ঝরে পড়ছে। থোকায় ৫টা আম থাকলে একটা অন্তত শুকিয়ে যাচ্ছে। এ রকম খরা চলতে থাকলে আমের ফলন কমে যাবে।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার লিচুচাষী সাব্বির হোসেনও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘গাছের গোড়ায় সকাল-বিকেল পানি ঢালছি। তাও লিচুর গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। গাছের চেয়ে মনে হচ্ছে মাটিতেই বেশি লিচু পড়ে আছে। এখন লিচুর জন্য বৃষ্টির খুব দরকার।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খরা পড়ছে, কিন্তু এখনই যে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে তা নয়। আম-লিচু তো এমন প্রতিকূল আবহাওয়ারই ফল। খরা হবে, ঝড়-বৃষ্টি, শিলা হবে, এর মধ্যে দিয়ে এগুলো বড় হবে। তবে এখন বৃষ্টি প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে পরিবেশটা ঠান্ডা হবে। তখন আর আমও ঝরবে না।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, এখন আম আর লিচু রক্ষা করতে সকাল-বিকেল গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। বিকেলের পানিটা গোড়ার পাশাপাশি গাছের ওপরেও স্প্রে করে দিতে হবে। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। বোরো ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বোরো ধান তো বেশি খরাতেই ভালো হয়। তবে এ জন্য নিয়মিত সেচেরও প্রয়োজন হয়। কৃষকেরা যেন এটা নিশ্চিত করেন।
এদিকে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রভাবে মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। বেড়ে গেছে গরমজনিত রোগবালাই। এতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ সংক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে বেশী। হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এখানে গরমজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে ৫২ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত হিটস্ট্রোক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অপরদিকে তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে উঠছে জনজীবন। অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে উঠছে মানুষ। তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় সবাই। তবে এখনো রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টির সুসংবাদ দিতে পারছে না আবহাওয়া দফতর।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ