রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বাগমারা প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। শরীর ও মন ঠিক থাকলে প্রতিটি মানুষকে সবকিছুই ভালো লাগে। বর্তমান সরকারের সময়ে বাগমারা উপজেলায় স্বাস্থ্যখাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা চোখে পড়ার মতো।
ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপির প্রচেষ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি ১৬টি ইউনিয়নে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
এ অঞ্চলের ডায়রিয়া ও পানি বাহিত রোগ সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সহকারী দ্বারা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে উদ্বুব্ধ করা হয়। এছাড়া শিশুদের মারাত্মক ১০ টি রোগ প্রতিরোধের জন্য ইপিআই টিকা দানের মাধ্যমে ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ফাইলেরিয়াসিস, আর্সেনিকোসিস রোগী সনাক্তকরণ সহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ সনাক্তকরণ ও রেফারাল কার্যক্রমে মাঠ কর্মীরা সহায়তা করে আসছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়ে আসছে। শুরু থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য পৃথক পৃথক ৩টি আবাাসিক ভবন ছিল। বর্তমান সরকারের মেয়াদে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ছোঁয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নতুন ৩টি আবাসিক ভবন তৈরী এবং চালু করা হয়।
৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। ১ অক্টোবর ২০১৪ সালে ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ফলে উপজেলার জনসাধারণ আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনসহ সকল ভবনের সংস্কার, স্যানিটেশন, সুয়্যারেজ লাইন, প্রধান ফকট, ইলেকট্রিক লাইন ইত্যাদি নতুনভাবে করা হয়। সম্প্রতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। সেই সাথে সাধারণ মানুষ যেন ভীত না হয় সে কারণে করোনা প্রতিরোধে প্রতিটি টিকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে গ্রহণ করেছেন।
বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ইওসি ভূক্ত হওয়ায় এখানে স্বাভাবিক ডেলিভারির পাশাপাশি সিজারিয়ান সেকশন চালু আছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ আন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে আগে থেকে এক্স-রে মেশিন ছিল। এমপি এনামুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে আরও ১টি নতুন এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে যা বর্তমান সরকারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এছাড়াও হৃদরোগের আক্রান্ত রোগীদের কথা বিবেচনা করে ২০১৪ সালে ১ টি এবং ২০১৬ সালে আরো ১টি নতুন ইসিজি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যা হৃদরোগের রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৯৫ সালে একটি সরকারী এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেলেও এ্যাম্বুলেন্সের বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দেওয়ায় বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ২০১৬ সালে একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেন। এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে জরুরী রোগীদের অল্প সময়ের মধ্যে শহরের হাসপাতাল গুলোতে পাঠানো হয়ে থাকে। এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে নিরলস ভাবে সেবা প্রদান করে আসছে। উন্নত চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক মানের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন সরবরাহ করেন।
স্বাস্থ্য সেবাকে আধুনিক এবং ডিজিটাল করার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতাল ও এর অধীন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মডেম সরবরাহ করা হয়েছে যা ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
করোনা কালীন সময়ে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। করোনার প্রথম ধাপে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার চিকিৎসা।
উপজেলা জুড়ে করোনা ভাইরাসে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেনি। এটা সম্ভব হয়েছে বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসায় সকল প্রকার চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করেছেন। সেই সাথে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবাকে ডিজিটালাইজেশন করতে ১৬২৬৩ নাম্বারের একটি কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল প্রকার স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সেবা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সী নাম্বর থেকে ২৪ ঘণ্টা ই-স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেটা বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় সেবাদান কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। সেবাদান কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিসিএসর মাধ্যমে সকল পদে চিকিৎসক নিয়োগ প্রদান করা হয়। সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ২য় শ্রেণিতে পদায়ন করে স্বাস্থ্য সেবায় এক মাইল ফলক সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাগমারায় মোট ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এছাড়া হাটগাঙ্গোপাড়া এলাকায় ২০ শয্যার আরো নতুন একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে বাগমারার স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মাঠ পরিদর্শক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, কমিউিনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারসহ বিভিন্ন শূণ্য পদে প্রায় ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিগত সময়ে পদগুলো শূন্য ছিল। বর্তমানে এসব ক্লিনিকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার রোগীকে ৩২ প্রকারের ঔষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এতে করে গরীব-অসহায় মানুষ হাতের নাগালেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে বর্তমান সরকার ২৮ প্রকার ঔষধ প্রদান করে আসছেন যা বিশে^র রোল মডেল হয়ে আছে। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২০১৪ সনে শ্রীপুর ইউনিয়নের রামগুইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক রাজশাহী জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সিসির কমিউনিটি ক্লিনিকের পুরস্কার লাভ করে।
স্বাস্থ্য সেবাকে ডিজিটাল করার জন্য ৩৮ টি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট মডেম প্রদান করা হয় এবং অন লাইনে রোগী রেজিস্টেশন ও তথ্য আদান প্রদান করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণ রোগীর পাশাপশি গত কয়েক বছরে ২ শতাধিক স্বাভাবিক ডেলিভারী করানো হয়েছে।
১৯৮৯ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে জন্ম থেকে ০১ বৎসরের সকল শিশুকে প্রতিরোধ যোগ্য ৬ টি রোগের বিরুদ্ধে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়ে। এ কার্যক্রম প্রথম থেকে সফলতার সাথে লক্ষ্য অর্জন করেছে। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে আরো ৪টি প্রতিরোধযোগ্য রোগের টিকা সংযোজিত করেছেন। শিশুর পাশাপশি গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৫-৪৯ বৎসর বয়সী সকল সন্তানধারনক্ষম মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা প্রদান করে আসছে।
হাসপাতাল সেবার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে ৩৮৪টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিরোধ যোগ্যে ১০ টি রোগের টিকা প্রদান করা হচ্ছে যা আশা ব্যঞ্জক। এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচী যেমন-ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, জাতীয় টিকা দিবস, (এনআইডি) আর্সেনিকোসিস, ফাইলেরিয়াসিস রোগী অনুসন্ধান, ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সকল ছাত্রছাত্রীকে ১ ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট সফলতার সহিত খাওয়ানো হচ্ছে।
অসংক্রামক রোগ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সর্ম্পকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে বাড়ী বাড়ী গিয়ে আর্সেনিকোসিস রোগী অনুসন্ধান কার্যক্রম চালু আছে।
বর্তমানে বাগমারায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ০.৫৮ ভাগ, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীর হার শতকরা ৮৩.০৩ ভাগ, মার্তৃমৃত্যু হার (এমএমআর) প্রতি হাজারে ০.৩১ জন, শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ১.২৫ জন, গর্ভকালীন সেবা শতকরা ৯৩ ভাগ, প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী শতকরা ৭১.১৩ ভাগ, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারী (পরিবার কল্যাণ সহকারী কর্তৃক) ৩৬১ জন, ৪৪০ জন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রসূতি মাকে মাদার এ্যান্ড বেবী কীট প্রদানের পাশাপাশি শতভাগ মাকে প্রসবোত্তর সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নিরলস প্রচেষ্টায় উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।