বৃহস্পতিবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে তরল দুধের চাহিদা দুই দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদনের পরিমাণ ছয় দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় জেলায় তরল দুধ বেশি উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন। এ তথ্য দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়।
জেলা শহরে খোলাবাজারে প্রতি লিটার তরল দুধের গড় মূল্য ১০০ টাকা। তবে উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় বাজারগুলোতে ৮০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছেন খামারিরা। কিছু উপজেলায় চাহিদা অনুসারে ৭০-৮০ টাকা লিটার দরেও বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় মোট গরু রয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার। এরমধ্যে নিবন্ধিত দুগ্ধ খামার রয়েছে ১৩ হাজার ৪৮০টি ও অনিবন্ধিত ছোট-বড় দুগ্ধ খামার চার হাজার ৬৮টি। এগুলো থেকে প্রতি বছর জেলায় ছয় দশমিক ৪৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়।
খামারিরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে দুধ শীতলীকরণ রাখার সুবিধা না থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যবস্থা থাকলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। দুধের অপচয়ও হতো না বলে দাবি তাদের।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মোহাম্মদ আলীর খামারের বয়স পাঁচ বছর। পরিশ্রম আর চেষ্টার কারণে লাভের মুখ তিনি ভালোই দেখছেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, দুধ উৎপাদন বেশি হলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। রমজান মাসে খামার থেকেই অনেকে ৮০ টাকা লিটারে নিয়ে যান। বর্তমান খামারে প্রতিদিন গড়ে ৬০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় শিয়ালকোল বাজারে নিয়ে ৮০-১০০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় এক ঘোষ তার খামার থেকে মাঝে মধ্যে দুধ সংগ্রহ করেন।
শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা গ্রামে কথা হয় গো-খামারি হাসিব খান তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, তার খামারে ৫৭টি গাভি রয়েছে। প্রতিদিন ৪২০-৪৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। তবে তাকে নির্ভর করতে হয় দানাদার খাদ্যের ওপর।
এ খাদ্যের দাম বেশি থাকায় প্রতিদিন দুধ বিক্রির সিংহভাগ টাকাই তাকে কিনতে হয় খাদ্য। তবে দুধের দাম একটু ভালো থাকায় খাদ্য কিনতে ঘর থেকে টাকা নিতে হচ্ছে না। রোজার আগে গোখাদ্য কিনতে তাকে নিয়মিত হিমশিম খেতে হতো।
শিয়ালকোল বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসা কামরুজ্জামান সাচ্চু বলেন, তার দুটি গাভি রয়েছে। প্রতিদিন ৫-৬ লিটার দুধ হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার দুধ ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হলেও কদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। গোখাদ্যের দাম অনুযায়ী বাজারে দুধের দাম সবসময় ১০০ টাকার বেশি থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বাজারে দুধ কিনতে আসা বিলধনী গ্রামের নিরন চন্দ্র কর্মকর ‘দুধের বাজার ঠিক নেই। প্রথম রোজায় কিনেছি ১১০ টাকা লিটার। আজ কিনলাম ৯০ টাকা লিটার।’
এনায়েতপুর পুরানবাজার এলাকার খামারি আলী আজম শিবলী তার খামারে গাভি রয়েছে ২৬টি। গড়ে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে দাম একটু বাড়লেও দানাদার খাদ্যের দাম বেশি থাকায় দুধ বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। তবে বর্তমানে খোলাবাজারে ৮০-১০০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি হওয়ায় কিছুটা ‘ব্যালেন্স’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, শাহজাদপুরে ৩২২টি প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির গরু থেকে প্রতিদিন দুই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপানকারী সমবায় সমিতির সভাপতি শহিদ আলী জানান, পোতাজিয়া দুগ্ধ সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৯৫ জন। এখান থেকে প্রতিদিন আট হাজার লিটার দুধ দেওয়া হয় মিল্কভিটায়।
রমজান মাস কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারগুলোতে দুধের চাহিদা বাড়ায় দাম একটু বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার। তার মতে, খামারিদের গোখাদ্যের দাম অনুযায়ী বাজার বেশি হয়নি।
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোরসালীন জেবীন তুরিন বলেন, দুধ একটি সর্বগুণসম্পন্ন খাদ্য। তাই একে বলা হয় ‘সুপার ফুড’। এ থেকে বোঝা যায় যে, দুধপানের উপকারিতা অনেক।