সিরাজগঞ্জে ভাগ্য ফিরছে ৯ শতাধিক পাটকল শ্রমিকের

রুমা ইসলাম, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে তিন বছর বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জুট মিল চালু হওয়ায় ভাগ্য ফিরেছে শ্রমিকদের। মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে ৯ শতাধিক শ্রমিক হতাশ হয়ে পড়েন। মিলটি কুষ্টিয়ার রশিদ গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০ বছরের ভাড়ায় আলেয়া জুট মিল নামে চালু রাখছেন।
মিল সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের রায়পুরে ৭৫ একর জমির ওপর নর্দান পিপলস্ জুট মিল নামে এ পাটকলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রায়ত্ত মিল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন মিলটি কমবেশি লাভজনক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এক শ্রেণির সুবিধাভোগী এবং কাঁচামাল ক্রয়ে শ্রমিক নেতাদের দুর্নীতিসহ নানা কারণে মিলটির লোকসান গুণতে হয়। অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মিলকে ঘিরে নানা ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসা প্রতষ্ঠানগুলোও পড়ে হুমকির মধ্যে।
এদিকে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় মিলটি। এরপর ২০১১ সালে শ্রমিক কর্মচারী ও জনসাধারণের আন্দোলনের কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘জাতীয় জুট মিল’ নামকরণ করে মিলটি পুনরায় চালু করে।
এরপর টানা কয়েক বছর চালু থাকলেও ঋণের ভারে ২০১৯ সালে আবারও বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। এতে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন শুরু করে। সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন থমকে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় জুট মিলে ৭ বছর ধরে কাজ করছেন মাকসুদা খাতুন (৩৫)। তিনি স্প্রিং ডিপার্টমেন্টে মেশিন চালান। শুরুতে ২০০ টাকা দৈনিক হাজিরায় কাজ শুরু করলেও বর্তমানে এসে এখন তার দৈনিক মজুরি দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকায়।
তিনি জানান, সরকার টানা তিন বছর মিল বন্ধের পর আলেয়া জুট মিলকে ভাড়া দিয়েছে। এখন আমি তাদের অধিনে দৈনিক হাজিরাতে কাজ করছি। এতে আমার বেশ ভালোভাবে সংসার চলছে।
শ্রমিক রুপালী খাতুন বলেন, মিলটি তিন বছর বন্ধ থাকায় খুব খারাপ অবস্থায় দিনযাপন করেছি। দেরিতে হলেও বেসরকারি খাতে মিলটি খোলার পর হতাশা মুক্ত হয়েছি।
সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলের অ্যাডমিন অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০ বছরের চুক্তিতে রশিদ গ্রুপ জাতীয় জুট মিলটি ভাড়া নিয়েছেন। তবে আমরা সরকারিভাবে বর্তমানে ১৭৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এটি দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত রয়েছি।
রশিদ গ্রুপের আলেয়া জুট মিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলাউদ্দিন বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে মিলটি ২০ বছরের চুক্তিতে ইজারা নেওয়ার পরের মাস থেকে কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
বর্তমানে ৯০০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এতে দৈনিক ২০ মেট্রিক টন চট ও বস্তা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এ উৎপাদন কিছু দিনের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সরকার জানান, এবার পুরো জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ হাজার ২৩০ মেট্রিন টন। কৃষক পাটের দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে এ উৎপাদন আরও বাড়বে।


প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ