শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক : পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবনে আরও দুইজনের মরদেহ পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বুধবার বিকালে বলেন, “ভবনের বেজমেন্টে দুজন পুরুষের মৃতদেহ পেয়েছেন আমাদের উদ্ধারকর্মীরা। দুটোই উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ওই বিস্ফোরণের পর রাতে মোট ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। স্বজনরা মোট তিনজনের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনকে।”
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “ভেতরে আর কারও মৃতদেহ আছে কি না, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।”
মঙ্গলবার বিকালে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাত তলা ওই ভবনে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হল, তাদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা বুঝে পেয়েছেন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত মোট ৬৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ১০ জন ভর্তি রয়েছেন। যারা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের অবস্থাও ভালো নয়।
এদিকে, পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত ও দগ্ধদের মধ্যে যে দশজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন, তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইয়ুব হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, সিদ্দিক বাজার থেকে আহত ১১ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। তাদের একজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাকি দশ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।”
ওই দশজনের মধ্যে মো. হাসান (৩২) ও ইয়াসিন (২৬) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এবং মো. মুছা (৪৫) ও আজম (৩৬) মেডিকেল হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এমএইচডিইউ) ভর্তি।
আইয়ুব হোসেন বলেন, “আইসিইউ ও এমএইচডিইউ ইউনিটে ভর্তি চারজনের অবস্থা বেশি খারাপ। আর পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি ছয়জনের অবস্থাও ভালো না। তবে আমরা আশাবাদী।”
পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি ছয়জন হলেন– খলিল (৫০), অলি শিকদার (৫৫), বাবলু (২৫), আল আমিন (২৫), বাচ্চু মিয়া (৫৫), জাহান (২৫) ও মোস্তফা (৫০)।
দগ্ধ এই দশজনের মধ্যে চারজনের শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি পুড়েছে। একজনের ৯৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। কারও শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি আগুনে পুড়ে গেলেই চিকিৎসকরা ওই রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হিসেবে বিবেচনা করেন।
মঙ্গলবার বিকালে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাত তলা ওই ভবনে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত মোট ৬৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২১ জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন।
রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি বাস কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ সন্ত্রাসী হামলা নয় বলে মত দিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেলে দেওয়া ব্যাখ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) বোমা নিস্ক্রিয়কারী ইউনিটের ইনচার্জ (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী এমনটি জানিয়েছেন।
গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ধারণার পক্ষে সম্ভাব্য ৫টি কারণ তুলে ধরেছে ডিএমপির সিটিটিসির বোমা নিস্ক্রিয়কারী ইউনিট। একইসঙ্গে সন্ত্রাসী হামলা না মনে হওয়ার চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ভবনের ধ্বংসস্তূপ, আহত ও নিহত হওয়ার ধরন দেখে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলটি মনে করছে, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ে গ্যাস জমতে পারে বলে মনে করছে তারা।
পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে-
১. ভবনের মাটির নিচে পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে।
২. দুটি ভবনের মাঝখানে একটি সেপটিক ট্যাংক ছিল, সেখান থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে।
৩. বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস জমতে পারে বা দেয়ালে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে পারে।
৪. পয়নিষ্কাশন লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমতে পারে।
৫. ভবনে থাকা বড় জেনারেটর থেকেও কোনোভাবে গ্যাস জমতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের দুই পাশে আরও দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে এবং এ ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন।