শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় দায়ের হওয়া একটি ধর্ষণ মামলার তদন্ত কাজে গাফিলতির দায়ে পুলিশের দুই উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা আদালতকে অবহিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ওই দুই এসআই হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সোহেল রানা। এরমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ওই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি রাজশাহীর তানোর থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পরে মামলার তদন্তভার পড়ে এসআই সোহেল রানার ওপর। তিনি পুঠিয়া থানাতেই আছেন। সোহেল রানাকেও বাদ দিয়ে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার তদন্তের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার হন ৬ বছরের এক কন্যাশিশু। ওই শিশুর চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গত বছরের ১ নভেম্বর ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এরপর ১৭ বছর বয়সী ওই চাচাতো ভাইকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে আদালত তাকে যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। ওই শিশু আসামি এখন সেখানেই আছে। মঙ্গলবার তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলা হওয়ার পরে ৮৯ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও দুই তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।
আদেশে আদালত বলেছেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলা। মামলার পর চার মাস ৭ দিন অতিবাহিত হলেও ভুক্তভোগীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়নি। নেওয়া হয়নি মেডিকেল সার্টিফিকেট। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন, গতকাল (সোমবার) ভিকটিমের জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে। এখনও মেডিকেল সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় শিশু আসামি হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবস এবং হাতেনাতে ধরা না পড়লে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে আইনে। কিন্তু এই মামলার পর ৮৯ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও আদালতে পুলিশ রিপোর্ট আসেনি।
আদেশে আদালত বলেছেন, কেন পুলিশ রিপোর্ট আসেনি সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়নি। ফলে মামলার বিচারকার্যে অযথা বিলম্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যা মূল মামলায় বিচার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালকে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা ৮৯ কার্যদিবসেও মামলার উল্লেখযোগ্য কোন কাজ করেননি মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারকার্যে বিঘ্ন সৃষ্টির সামিল। তাই আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়ী বলে আদালত মনে করে। এটি তাদের অদক্ষতা ও অসদাচরণ বলে বিবেচিত। তাই মামলা তদন্তে অযথা বিলম্ব, মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ না করা, আলামত জব্দ না করা এবং তদন্তের অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজ করে পুলিশ রিপোর্ট যথা সময়ে আদালতে উপস্থাপন না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার আমলী আদালতকে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পরে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এখন প্রথমজনের তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে সময় লাগে। সে কারণে হয়তো পুলিশ রিপোর্ট দেওয়া যায়নি। আর তদন্ত রিপোর্ট না পেয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের বিষয়টি আমি এখনও জানি না। আদেশের কপি থানায় এলে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। কর্তৃপক্ষ আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’