সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: কাতার বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো দলগুলোর মধ্যে একটি ক্রোয়েশিয়া। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর মরক্কোকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল দলটি। কিন্তু এবারের ফিফা বর্ষসেরার মনোনয়নে ক্রোয়াটদের উপস্থিতি যৎসামান্য। লুকা মদ্রিচই কেবল ফিফপ্রো একাদশে আছেন, বাকিদের ঠাঁই মেলেনি কোথাও। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার এমন আচরণে বেজায় ক্ষেপেছেন ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ।
ক্রোয়েশিয়াকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগ তুলে ফিফার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
ফিফার বর্ষসেরা কোচ, খেলোয়াড় নির্বাচনে ভোট দেন জাতীয় দলের কোচেরাও। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার নায়কদের প্রতি ফিফার ‘শ্রদ্ধার ঘাটতি’র কারণে ভোট দেননি দালিচ। সেরা কোচের সংক্ষিপ্ত তিনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার লিওনেল স্কালোনি, রিয়াল মাদ্রিদের কার্লো আনচেলত্তি এবং ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গুয়ার্দিওলা ঠাঁই পেলেও জায়গা হয়নি দালিচের। এই কোচের হাত ধরে ক্রোয়েশিয়া ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে হয়েছিল রানার্সআপ, কাতার বিশ্বকাপে হয় তৃতীয়।
মরুভূমির বিশ্বকাপে ক্রোয়াটদের জার্সিতে মাতেও কোভাসিচ, ইয়োস্কো গাভারদিওল ও দমিনিক লিভাকভিচও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন, কিন্তু তারাও ছিলেন না কোনো বিভাগের মনোনয়নে। দালিচের দাবি ফুটবলের বড় দেশগুলোর খেলোয়াড়দের মতো তার খেলোয়াড়দের আরও স্বীকৃতি প্রাপ্য।
কাতারের আসরে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। পরে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা হেরে যায় আর্জেন্টিনার কাছে। এরপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জিতে টুর্নামেন্টে রূপকথা লেখা মরক্কোর বিপক্ষে। এরপরও সেরার মনোনয়নে ক্রোয়াটদের উপেক্ষিত হওয়া মেনে নিতে পারছেন না দালিচ।
“আমরা যেমন পারফর্ম করেছি, যদি ইংলিশ, ব্রাজিলিয়ান, স্প্যানিশ, জার্মান কিংবা ইতালিয়ান খেলোয়াড় এবং কোচরা যদি একই ফল পেত, তাহলে তারা সম্ভাব্য সব পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকত।” “আমাদের জন্য, আমাদের জাতীয় দল, খেলোয়াড় এবং আমার জন্য আমি আরও বেশি সম্মান চাই। কেননা, আমরা দুটি পদক জিতেছি; এর চেয়ে বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য আমরা। ফিফার বরং এটা বড় প্রচার করা উচিত যে, ক্রোয়েশিয়ার মতো ছোট একটা দেশ বিশ্বের বড় দেশগুলোর বিপক্ষে লড়াই করতে পারে। আর সেটাই সারা ফুটবল বিশ্বের জন্য সবচেয়ে সুন্দর বার্তা হতো।”
কাতারে তৃতীয় হওয়া এবং উয়েফা নেশন্স লিগে চার দলের ফাইনালসে জায়গা করে নেওয়া ক্রোয়েশিয়ার প্রতি ফিফার এমন আচরণ কিছুতেই মানতেই পারছেন না দালিচ। “ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের প্রতি ফিফার আচরণে আমি হতাশ। একটা জাতীয় দল হিসেবে আমরা যা অর্জন করেছি, তার উপর ভিত্তি করে আমি খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করি, বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার কাছ থেকে আমরা যে সম্মান পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি পাওয়ার যোগ্য।”
“কাতার বিশ্বকাপ এবং চলমান উয়েফা নেশন্স লিগের সেরা চারে থাকা একমাত্র দল আমরাই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দল ব্রাজিলকে হারিয়ে আমরা বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলাম। আর ফ্রান্সের মতো আমরাই একমাত্র দল হিসেবে সম্প্রতি হওয়া দুই বিশ্বকাপে পদক পেয়েছি।” রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স। এবার দিদিয়ের দেশমের দল হয় রানার্সআপ। কাতারে তৃতীয় হওয়া ক্রোয়েশিয়ার অন্য ম্যাচগুলোতেও পাওয়া সাফল্যও তুলে ধরে দালিচ।
“এ বছর আমরা প্যারিসে ফ্রান্সকে হারিয়েছি, কোপেনহেগেনে হারিয়েছি ডেনমার্ককে। বিশ্বকাপ থেকে আমরা ব্রাজিল ও বেলজিয়ামকে বিদায় করেছিলাম। ২০২০ ইউরোর পর থেকে খেলা ২৩ ম্যাচে মাত্র দুটিতে হেরেছি আমরা। এতকিছু করার পরও তালিকাটা দেখুন, ফিফার দা বেস্ট মেন’স প্লেয়ারের ১৪ জনের তালিকায় আমাদের আছে কেবল গ্রেট মদ্রিচ। ক্রোয়েশিয়ার আর সব খেলোয়াড় কোথায়?”
“সেখানে মাতেও কোভাসিচের জন্য আসলেই কোনো জায়গা ছিল না? ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপ জেতার পর এবং কাতার বিশ্বকাপে ব্রিলিয়ান্ট পারফরম্যান্স করার পরও ঠাঁই হলো না? কোথায় ইয়োস্কো গাভারদিওলের নাম? ৃআর কাতারে লিভাকভিচ যা কিছু করেছে, তারপরও সে ফিফার সেরা গোলরক্ষকের মনোনয়ের পাঁচ জনের মধ্যে থাকতে পারে না?”
বর্ষসেরা কোচ নির্বাচনে প্রথমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন পাঁচ জন। দিদিয়ে দেশম ও ওয়ালিদ রেগরাগিকে বাদ দিয়ে তিন জন চূড়ান্ত ফাইনালিস্টের তালিকায় ছিলেন লিওনেল স্কালোনি, পেপ গুয়ার্দিওলা ও কার্লো আনচেলত্তি। দালিচের ঠাঁই-ই মেলেনি। এই প্রাপ্য সম্মান না পাওয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৫৬ বছর বয়সী এই ক্রোয়াট। “বিশ্বকাপে মরক্কোর সাফল্যের কারণে দলটির কোচের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা তাদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছি, একটিতে ড্র করেছি এবং আরেকটিতে জিতে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি।”
“আমার মনে হয়, যে সম্মান আমাদের প্রাপ্য, আমরা সেটা পাই না। বিশ্বকাপে আমাদের ম্যাচের টাইমিং, আমাদের ম্যাচগুলোতে রেফারিংয়ের মান-বিশেষ করে সেমি-ফাইনাল ম্যাচের কথা বলা যায়-এসব কারণে আমার মনে হয়, ক্রোয়েশিয়ার প্রতি শ্রদ্ধার কমতি আছে।“