সর্বশেষ সংবাদ :

চরবাসী চায় পৃথক ইউনিয়ন : আইনগত জটিলতা রেখেই পবার হরিয়ান ইউপির সীমানা নির্ধারণ

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে আইনগত জটিলতা রেখেই পবার হরিয়ান ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে ইউপির বিভিন্ন সেবা নিতে চরবাসীর যে দুর্ভোগ তা মিটলোনা, অন্যদিকে চরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ গঠন অধরায় থেকে গেল।
জানা গেছে, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের সিমানা নির্ধারন সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। পবা সিমানা নির্ধারন কর্মকর্তা ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। নতুন সিমানা নির্ধারনে তেমন কোন পরিবর্তন না আসায় এলাকাবাসি হতাশ।
বিশেষ করে চরের অবহেলিত মানুষ শুধুমাত্র সীমানার অখন্ডতা না থাকায় সরকারি সকল সেবা পেতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সেবা পাচ্ছেন না তারা। অথচ সীমানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচন হয়নি হরিয়ান ইউনিয়নে। অবশেষে আইনগত জটিলতা রেখেই চূড়ান্ত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে কাটাখালী পৌরসভা গঠিত হয়। তখন স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান গঠনের নিয়ম ও শর্তকে (সীমানা বিষয়ে) তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কাটাখালী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। মৌজাগুলো হচ্ছে মাসকাটাদিঘী, সমসাদিপুর, বাখরাবাদ, শ্যামপুর ও কাপাসিয়া।
জানা যায়, তখন জোট সরকার ক্ষমতায় ছিলেন। বেছে বেছে বিএনপি-জামায়াত অধ্যূষিত এলাকা বা মৌজা নিয়ে কাটাখালী পৌরসভা গঠিত হয়। সেখানে হরিয়ান ইউনিয়নের বেশ ক’টি গ্রাম খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে। যা ২০ বছরেও সমাধানে আসেনি। অথচ ওয়ার্ডসমূহের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এলাকার ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং জনসংখ্যার বিন্যাস ও প্রশাসনিক সুবিধাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে ওয়ার্ড বিন্যাসের শর্ত রয়েছে।
সচেতনমহল মনে করেন, পবা উপজেলার হরিয়ান ও হরিপুর ইউনিয়নের অখন্ডতা আনতে হলে পদ্মার ওপারে আলাদা ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের বিকল্প নাই। এতে একদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সকল শর্ত ঠিক থাকবে এবং অন্যদিকে জনগণ ইউনিয়ন পরিষদের সকল সেবাসহ সামাজিক নিরাপত্তার সেবাসমুহ সহজে ভোগ করতে পারবেন।
জানা গেছে, হরিয়ান ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ৮নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যাও প্রায় দুই হাজার। এখানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এছাড়াও হরিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড চর মাঝাড়দিয়ারের ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ১শ’। আর জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এই চরগুলো নিয়ে পৃথক ইউনিয়ন গঠনের দাবী চরবাসির দীর্ঘদিনের। এনিয়ে তারা ইতিপুর্বেও জেলা প্রশাসকের স্মরনাপন্ন হয়েছেন। কারন এদেশের অনেক স্থানে এখনো ৭-৮ হাজার ভোটারের ইউনিয়ন পরিষদ আছে।
জানা গেছে, চরবাসীর হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন করতে খরচ হয় ১২শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। যার মধ্যে একবার যাতায়াত করলেই ভাড়া লাগে প্রায় ৪শ’টাকা। শুধু জন্ম নিবন্ধনেই নয়-নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ওয়ারিশন সনদ পেতেও প্রতিজনের যাতায়াত খরচ হয় ৪শ’ টাকা। আর যে মানুষটি এসব কাজের জন্য এপারে আসেন নিজের শ্রম ব্যয় হয় ৫শ’ টাকা। কোন কারণে দু’তিন দিন ঘুরতে থাকলে যাবতীয় ব্যয় দাঁড়াই তিন হাজার টাকা। যা শুধমাত্র সীমানার অখন্ডতা না থাকার কারনে। এমনভাবেই বলছিলেন চরতারানগর ও চরখিদিরপুরের মানুষ। তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হলে তাদেরকে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উঠতে হয়। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে কাটাখালী পৌরসভা হয়ে হরিয়ান ইউনিয়নে যেতে হয়। সময়, নিরাপত্তা, ভাড়া ও শ্রম কমাতে তারা এখন পদ্মার ওপারে একটি আলাদা ইউনিয়ন পরিষদ চান।
চর তারানগর এলাকার সোহেল রানা (২৮) বলেন, তার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যয় হয়েছে ১৮শ’ টাকা। এছাড়াও একই এলাকার বৃদ্ধ বুলু (৭৫) বলেন, তার নাতির জন্ম নিবন্ধন করতেও ব্যয় ১২শ’ টাকা। কোন কাজে এপারে আসলে পুরোদিনই চলে যায়। আবার কোন কারণে চেয়ারম্যান না থাকলে ব্যয় আরো বেড়ে যায়। সরকারের সহযোগিতা ও অনুদান পেলেও শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় আমরা উপকৃত হতে পারি না। টিসিবির পন্য, ভিজিডি, ভিজিএফ নিতেও ভাড়া দিতে হয় প্রায় ৪শ’ টাকা। আবার যাদের সুস্থ্য ও সবল দেহ আছে তারাই শুধু শ্রম কামাই করে এপারে আসে।
বয়স্ক ভাতা পান আলেজান, মতিজান, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পান শাহানাজ, বিধবা পান সখিনা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পান পিয়ারা। তারা জানান, ভাতা নিতে এসে তাদের অনেক খরচ হয়।
পদ্মার ওপারের হরিয়ান ইউপি’র সদস্য গোলাম মোস্তফা ও কহিনূর বেগম বলেন, আমরা খুবই বিপদে থাকি। প্রথমে পদ্মা নদী পার হয়ে সিটিতে উঠতে হয়। সিটি পেরিয়ে কাটাখালী পৌরসভা। তারপর হরিয়ান ইউনিয়ন। টাকা খরচের পাশাপাশি সময়, পরিশ্রম সবই বেশী লাগে। কিন্তু কাংখিত ফল পাওয়া যায় না। আবার কোন কোন দিন নৌকা ফেল করলে এপারে বাধ্য হয়ে কোথাও থেকে যেতে হয়।
এসব কষ্ট লাঘবে ও কম খরচে দোড়গোড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সমস্ত সেবা পেতে তারাও অন্যান্য জনগণের মতই হরিয়ানের ৮ ও ৯ এবং হরিপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ড (চর মাঝাড়দিয়াড়) নিয়ে পদ্মার ওপারে একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ চান। তাদের মত স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ চান চরখিদিরপুরের আবুল কালাম, আজিজুল হক, আব্দুূল জলিল, হায়দার আলী, আফাজ খা, মোজাম্মেল হক, তারানগরের আব্দুর জলিল, বাবু, সাইদুর, ভুট্টু, লালন প্রমুখ। পদ্মার ওপারে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ হলে সীমানার খন্ডতা কেটে যাবে।
চর মাঝাড়দিয়াড়ের সাবেক ইউপি সদস্য শামীম শেখ বলেন, পবার চারের মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্ভোগ লাঘবের জন্য হরিয়ান ও হরিপুরের চর নিয়ে আলাদা ইউনিয়ন গঠন এখন সময়ের দাবী। গোদাগাড়ী উপজেলার চর আসাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যেমন চরবাসীর দুর্ভোগ কমিয়েছে। এখানেও সেটা করা উচিত।
পবার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মঞ্জিল ও হরিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু এবিষয়ে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে এসে বিভিন্ন সেবা নিতে চরের মানুষের অনেক কষ্ট হয়। এজন্য তারা চরে আলাদা ইউনিয়ন দাবী করছেন। তাদের দাবীর প্রতি চেয়ারম্যানরা একমত প্রকাশ করেন।


প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর