বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পদ-প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত নিয়েছে দলটি হাইকমান্ড। গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী এই তিনদিন জীবন-বৃত্তান্ত জমা নেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহানগর ও জেলা যুবলীগের চারটি পদের জন্য ৬০ জন নেতা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে মহানগর থেকে ৩০ জন ও জেলা থেকে ৩১ জন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যুবলীগের হাইকমান্ড থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। সম্প্রতিব যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরীত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পদ-প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী রাজশাহীর ৬০ জন নেতা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেন।
জানা গেছে, মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৩০ জন নেতা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১১ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন।
সভাপতি পদের জন্য যারা জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন এদের মধ্যে রয়েছেন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, আশরাফুল আলম, মুখলেছুর রহমান মিলন, আমিনুর রহমান খান রুবেল, কাওসার রহমান নাইজার, ইউসুফ আলী, মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী ইতু।
এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন এদের মধ্যে রয়েছেন, নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রয়েল, মনিরুজ্জামান খান মনির, মুকুল শেখ, এ্যাড. মাজেদুল আলম শিবলী, রেজাউর রহমান রাজীব, রমজান আলী জনি, জয়নাল আবেদীন, পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, আরকান বাপ্পি, সোহেল রানা, আব্দুল আজিজ, সুজন আলী।
অন্যদিকে, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেও ৩১ জন নেতা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদের জন্য ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন।
সভাপতি পদের পদ-প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, আলমগীর মুর্শেদ রঞ্জু, হাসান মাহমুদ ফয়সাল সজল, আরিফুল ইসলাম রাজা, মোজাহিদ হোসেন মানিক, তাসিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, এমদাদুল হক এমদাদ।
অপরদিকে, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছেন, মোবারক হোসেন মিলন, ওয়াসিম রেজা লিটন, সামাউন ইসলাম, রফিকুজ্জামান রফিক, সিজানুর রহমান, কামরুল ইসলাম মিঠু, হাবিবুর রহমান, মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেমস, ফয়সাল কবির রুনু, মুক্তার হোসেন।
এদিকে, মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। দীর্ঘ দিন ধরে তার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা রয়েছেন। তার পরে সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন আব্দুল মোমিন ও শরিফুজ্জামান শরিফ। তারা দুইজনও শক্ত অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রে তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
মহানগর যুবলীগ সভাপতি পদ-প্রত্যাশি তৌরিদ আল মাসুদ রনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সকল বিষয় বিবেচনা করলে অবশ্যই আমি এ পদের জন্য শতভাগ আশাবাদী’।
তৌরিদ আল মাসুদ রনি আরো বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটি আর থাকবে না। আমরা সবাই মিলে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
জানতে চাইলে সভাপতি পদ-প্রত্যাশী শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই মহানগর যুবলীগে একই নেতৃত্ব। কর্মীরা এখন সম্মেলন চান। তারা মনে করছেন যে, সাবেক ছাত্রনেতারা যুবলীগের নেতৃত্বে এলে ভালো হবে। আমি নেতাকর্মীদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে তা গ্রহণ করব।’
অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন প্রায় দেড় ডজন নেতা। যাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান। তিনি বর্তমানে কোনো পদে না থেকেও তৃণমূল পর্যায়ে যুবলীগকে চাঙ্গা করে রেখেছেন তিনি।
যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ‘সংগঠনে প্রায় অস্তিত্বহীন দুই নেতার অবসান দেখতে চাই আমরা। ‘দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত সম্মেলন হলে আবারও প্রাণ ফিরে আসবে সংগঠনে। নতুন নেতৃত্ব পেলে তৃণমূল আবারও চাঙ্গা হবে।’
নাহান ছাড়াও এই পদের জন্য শক্ত অবস্থান নিয়ে জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর ছেলে রায়হানুর রহমান রয়েল। তিনি বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
রায়হানুর রহমান রয়েল বলেন, ‘ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃত্বে থেকে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। প্রচার, মিছিল, সভা, সমাবেশে নেতা-কর্মী নিয়ে আমার সরব উপস্থিতি ছিল নিবেদিত। পারিবারিকভাবে নয়, আমার পরিশ্রম ও মেধা দিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। একটা শিক্ষিত যুবলীগ গড়ে তুলতে চাই। যারা- দল, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বুজবে এবং দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নে নিজেদের সহযোগিতা বাড়িয়ে দিবে’।
মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নতুন নেতৃত্ব পেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আবারও চাঙ্গা হবেন।’
অপরদিকে শীর্ষ পদে না থাকলেও সংগঠনটিকে চাঙ্গা করে রেখেছেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন। তার নেতৃত্বে জেলা যুবলীগের বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি গঠনসহ দলীয় নানা কর্মকান্ডে সক্রিয় নেতাকর্মীরা। ফলে তৃণমুল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা কেন্দ্র থেকে তাকে মনোনীত করলে জেলা যুবলীগ আরো শক্তিশালী ও গতিশীল হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই পদে যাঁরা বসেছিলেন ১৮ বছর পরও তাঁরা বহাল রয়েছেন। ফলে পুরনো কমিটিতে সংগঠন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। নানা বিতর্কের মধ্যে কেটে গেছে রমজান-বাচ্চুর কমিটির মেয়াদ।
আবার রাজশাহী জেলা যুবলীগের নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চে। প্রায় ৭ বছর আগে। সভাপতি নির্বাচিত হন আবু সালেহ। যিনি ১৮ বছর থেকে একই পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এবারে নতুন অনেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চান। তারা অনেকেই জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।