রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে কুমিল্লার চতুর্থ শিরোপা

স্পোর্টস ডেস্ক : বিপিএলের নবম আসরের ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ঘুরেছে পেন্ডুলামের মতো। লড়াইয়ে কখনো এগিয়েছে সিলেট আবার কখনও কুমিল্লা। তবে শেষ হাসিটা হেসেছে ইমরুল কায়েসের দল। ফাইনালে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখে চতুর্থবারের মতো বিপিএলের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ৫২ বলে ৭৯ রান করে কুমিল্লার জয়ের নায়ক জনসন চার্লস।
১৬ তম ওভার পর্যন্ত ম্যাচ ছিল হাড্ডাহাড্ডি। কিন্তু রুবেল হোসেনের ১৭তম ওভারেই ঘুরে যায় খেলার মোড়। গুরুত্বপূর্ণ সে ওভারে ২৩ রান দিয়েছেন ডানহাতি এ বোলার। আর তাতে খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কুমিল্লার হাতে। ৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কুমিল্লা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সংগ্রহটা খারাপ দাঁড় করায়নি সিলেট। নির্ধারিত ২০ ওভারে সিলেটের দলটি করে ১৭৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে কুমিল্লা। চাপ কাটিয়ে পথ দেখিয়েছেন জনসন চার্লস ও লিটন দাস। লিটন ফিফটি করে ফিরলে আবারও একটু চাপ আসে কুমিল্লার ওপর। তবে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন চার্লস।
ফাইনালের প্রথম ইনিংসে লড়াই হয়েছে বেশ। শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছে সিলেট। ক্যাচ মিসের মহড়া দেখিয়েছে কুমিল্লার ফিল্ডাররা। কয়েকবার সুযোগ পেয়েছেন শান্ত, রায়ান বার্ল এবং জর্জ লিন্ডেরা। সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন প্রায় সবাই-ই। ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংসে দলকে এনে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।
টস জিতে নিজের পছন্দেই বোলিং নিয়েছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। কিন্তু প্রথম ওভারে আন্দ্রে রাসেল অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। শান্তর তিন বাউন্ডারি ও একটি বাই রানের বাউন্ডারিতে প্রথম ওভারেই ১৮ রান করে সিলেট। শুরুটা উড়ন্ত হলেও দ্বিতীয় ওভারেই লাগাম টেনে ধরেন তানভীর ইসলাম।
ওভারের প্রথম বলেই ফর্মে থাকা তৌহিদ হৃদয়কে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার। আগের দুই ম্যাচে সাফল্য পেলেও আজ তিনে নেমে ব্যর্থ মাশরাফি বিন মুর্তজা। ১ রানে আন্দ্রে রাসলের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন অধিনায়ক। এরপর দলের হাল ধরেন শান্ত ও মুশফিক। দুজনে মিলে গড়েন ৭৯ রানের অনবদ্য এক জুটি।
৬৪ রান করে মইন আলীর বল সামনে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শান্ত। শান্তর বিদায়ের পর আসেন রায়ান বার্ল। শুরু থেকেই একের পর সুযোগ দিলেও কয়েকবার তার ক্যাচ মিস করেন কুমিল্লার ফিল্ডাররা। শেষমেষ ১৩ রান করে মুস্তাফিজের বলে কাটা পড়েন তিনি।
নিয়মিত সাত কিংবা আট নম্বরে নামা থিসারা পেরেরা আজ এসেছিলেন ছয় নম্বরে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার। প্রথম বলেই হয়েছেন বোল্ড। জর্জ লিন্ডে ৯ রান করার পথে জীবন পেয়েছেন দুইবার, ফিরেছেন মুস্তাফিজের বলে।
এক প্রান্তে কেউই থিতু হতে না পারলেও অন্য প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। শেষ পর্যন্ত ৭৪ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দেন বড় সংগ্রহ। কুমিল্লার হয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভারেই ২৬ রান করে কুমিল্লা। তৃতীয় ওভারে সুনীল নারিনকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন রুবেল হোসেন। পরের ওভারে ইমরুল কায়েসকে ফেরান জর্জ লিন্ডে। ষষ্ঠ ওভারে জনসন চার্লসকে ফেরানোরও সুযোগ এসেছিল। কিন্তু লিন্ডের বলে সে ক্যাচ হাতছাড়া করেন রুবেল।
রুবেলের ভুল কাজে লাগিয়েছেন চার্লস। ব্যাটিং করেছেন একদম শেষ ওভার পর্যন্ত। ৭৯ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই ছেড়েছেন মাঠ। ৩৯ বলে ৫৫ রান করে চার্লসকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন লিটন দাস। তবে শেষ দিকে লিটন ফিরলে ২৫ রান করে চার্লসকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটা ভালোভাবেই সেরেছেন মইন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ