মঙ্গলবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ ইং, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বং।
সানশাইন ডেস্ক: দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নের অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করবে না।
দেশের পাঁচ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ৫ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উপলক্ষে বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবনযাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারে না।
“যাদের ঘরবাড়ি নাই এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল, সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।” বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’ এর চাবি হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের অপরপ্রান্ত রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধারা যুক্ত ছিলেন। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে অনাবিষ্কৃত বধ্যভূমিগুলো খুঁজে বের করে সংরক্ষণের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আজ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমি আশা করি, আরও যারা মুক্তিযোদ্ধা বাকি আছেন, তাদের সকলের জন্যই এই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। সাধারণ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের জন্যও সরকার ঘর করে দিচ্ছে “।
তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ ৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মাঝে বীর নিবাস হস্তান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। আশা করি এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। যদিও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসেব করে চলতে হচ্ছে।”
বিশ্ব মন্দার অভিঘাত থেকে বাঁচতে দেশবাসীকে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদে যুক্ত করার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। “ভবিষ্যতে যেন খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্যই আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সেজন্যই আমার এই আহ্বান, যে যেখানে পারেন প্রত্যেকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং অন্যকেও খাওয়ান।”
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’ এর চাবি হস্তান্তর করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া, ওই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ‘বীর নিবাস’ এর উপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার ঘর, একটি রান্নাঘর এবং একটি করিডোরসহ প্রতিটি একতলা ‘বীর নিবাস’ ১৪ দশমিক ১০ লাখ টাকায় নির্মিত। বাড়ির রঙ করা হয়েছে দেশের জাতীয় পতাকা লাল-সবুজে রঙে। নিবাসে রান্নাঘরের পাশে উঠান, একটি নলকূপ, একটি বাথরুম এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির শেড রয়েছে।