হলকক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন: রাবিতে শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পাশাপাশি অভিযুক্তরা শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থী।
গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান ও হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের ৭-৮ জন কর্মী হলের দ্বিতীয় ব্লকের ৩৮৩ নম্বর রুমে এসে কৃষ্ণ রায়কে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। বের হতে রাজি না হলে এসময় তার বেডপত্র তুলে ফেলে দিয়ে তারা আরেকটি বেড তুলে দেয়। এরপর কৃষ্ণকে সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের রুমে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বলেন, আমি রাতে পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ করে তারা আমার রুমে এসে বেডপত্র ফেলে দেয়। আমাকে রুম থেকে বের হতে বললে আমি বের না হয়ে চেয়ারে বসে থাকি। সোলায়মান নামে এক ভাই আমাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দেয়া শুরু করে। আমি ভিডিও করতে চাইলে আমার ফোন কেড়ে নেয়। এরপর আমাকে জোর নাইম ভাইয়ের রুমে নিয়ে যায়।
কৃষ্ণ আরো বলেন, এসময় সঙ্গে থাকা আমার বন্ধু মাহবুব আমার পেছন পেছন এসে রুমে ঢুকলে তার ফোনও ওরা কেড়ে নেয়। তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নাইম ভাইয়ের সামনে আমাকে কান ধরিয়ে উঠবস করায়। আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি হিন্দু জানার পর বলে- ‘তোকে এখন মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’
ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে থাকা বন্ধু একই বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব বিল্লাহ বলেন, আমি ওকে ধস্তাধস্তি করতে দেখে ছুটে যাই। ওরা আমাকে রুমে ঢুকতে দিতে না চাইলে জোর করে ঢুকলে আমার কাছ থেকে একজন মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে বের করে দিলেও আমার মোবাইল দেয়নি। আধঘন্টা পর আমার মোবাইল ফিরিয়ে দেয়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম বলেন, আমার রুমে নিয়ে এসে মারধর করার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে এটা ঠিক সেই কক্ষে একটা সীটের জন্য আমার কর্মীরা গিয়েছিল। সেখানে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। পরে বিষয়টির সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত মো. সোলায়মান বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। একটু ভুল বোঝা বুঝি হয়েছে। আমি ওই ছেলের পাশের কক্ষেই থাকি। সেদিন ওর কক্ষে যাওয়ার পরই সে ভিডিও করা শুরু করেছিল। পরে ওই ছেলের বিভাগের সিনিয়রদের সম্মুখে সেই ভিডিও ডিলিট করিয়েছি। এরপর ঘটনাটির সমাধান হয়ে গেছে। এ ঘটনায় উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে কথাকাটি হয়েছিল। পরে এবিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি এবং ঐছেলে ওই সিটেই রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষঅধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাইনি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ