শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
তানোর প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ও কলমা ইউনিয়নে অবস্থিত হাতিশাইল ও ঘৃতকাঞ্চন খননকৃত খালে মাছ চাষের পরিবর্তে ধান চাষ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে করে খাল পুনঃখননের নামে পুকুর চুরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে বরাদ্দের ৫৫ লাখ টাকা খালের জলে ফেলে ভাগ বাটোয়ারাতে এলাকায় বইছে সমালোচনার ঝড়। এমন দূর্নীতিতে সরেজমিন তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি তুলেছেন ওই এলাকার কৃষকরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র সরকারি অর্থ তসরুফের উদ্দেশ্যে কোনো সম্ভব্যতা যাচাই না করে হাতিশাইল ও ঘৃতকাঞ্চন খাড়ি নামমাত্র পুনঃখনন দেখানো হয়। লোক দেখানো এমন প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জুরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তানোর উপজেলায় টেকসই ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০টি সমিতির মাধ্যমে হাতিশাইল ও ঘৃতকাঞ্চন এলাকার প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার খাড়ি পুনঃখননে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। পরে ২০২২ সালের ২০ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো দরপত্র আহবান করা হয়নি। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো খরা মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে একদিকে কৃষক তাদের দায় সারবেন। অন্যদিকে মাছ চাষও হবে। কিন্তু দূর্নীতিতে এসব উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। অযথা এমন খাড়ি পুনঃখননে কৃষকের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। তবে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পকেটভারী হয়েছে। কৃষকরা জানান, এই খাড়ি পুনঃখননের কোনো মানে হয় না। এটা সরকারি অর্থের অপচয় ও কৃষকের দূর্ভোগ ছাড়া কিছু নয়।
তারা বলেন, কৃষকের মতামত উপেক্ষা করে এর আগেও বিএমডিএ প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে একবার খাড়ি খনন ও ক্রসড্যাম নির্মাণে কৃষককের ক্ষতি ব্যতিত লাভ হয়নি। কারণ একটু বৃষ্টিতে ক্রসড্যামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমের আগেই খাড়ি শুকিয়ে যায়। অথচ সেই খাড়ি আবার পুনঃখননের হেতু কি ? আর এতে লাভ কার কৃষকের না খাড়ি খননকারী সংশ্লিষ্টদের?
৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন করা খাড়ির বুকে বোরো ধানের খেত। যেনো তেনোভাবে পুনঃখননের সেই মাটি ফেলা হয়েছে খাঁড়ির পাড়ে। এতে নষ্ট হয়েছে আবাদি জমির ফসল। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে কাজ হয়েছে সেটাও দায়সারা মাত্র।
স্থানীয় কৃষক মিলন, আজিজুল ও মেহেদি বলেন, অযথা খাড়ি পুনঃখননে শুধু সরকারি অর্থ তছরুপ ছাড়া আর কিছু নয়। তারা খাড়ি পুনঃখনন কাজের শুরুতে বন্ধের দাবি করেছিলেন। বিএমডিএর নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে এসব খাড়ি পুনঃখনন করার কোনো মানে হয় না। এতে অসময়ে জলাবদ্ধতা আবার শুষ্ক মৌসুমের আগেই পানি শুণ্যতা দেখা দিবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে এসব খাড়ি পুনঃখনন করা হয় না। তবে, আরো বিস্তারিত জানতে হলে তিনি অফিসে যোগাযোগ করতে বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
সরজমিনে দেখা গেছে, খাড়িতে প্রকল্প সাইনবোর্ড সাটানো আছে। এতে লেখা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি। উপ-প্রকল্পের ম্যাপ, উপ-প্রকল্প হাতিশাইল ঘৃতকাঞ্চন, উপ-প্রকল্প। উপ-প্রকল্পের ধরন, পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষন। এসপি নম্বর ২২০২৪। উপ-প্রকল্পের পরিমান ৭০০ হেক্টর। পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ঘৃতকাঞ্চন হাতিশাইল মাধ্যমে খনন কাজ করা হয়। উপকারীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৪৪। অর্থায়নে এডিবি, জিওএন ও জিওবি।
উপকার তো দূরে থাক কৃষকের কোন কাজে আসেনি প্রকল্প। শুধু কর্তাবাবু ও সমিতির নেতাদের ভরেছে পকেট বলেও মনে করছেন কৃষকরা। এধরনের প্রকল্প নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা করা উচিৎ। এছাড়াও খাল পুন:খননের শুরুতে প্রতিবেদন হয়। কিš‘ খননের নামে ৫৫ লাখ টাকা জলে যায়।
সমিতির সভাপতি কলমা ইউপি এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতা নুরুল ইসলাম জানান, সঠিক নিয়মে খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কিভাবে থাকবে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
সানশাইন / শামি