সোমবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সোনামসজিদ স্থলবন্দর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ স্থলবন্দর খুলে দেওয়া হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এর আগে গেদে বন্দর খুলে দেওয়ারও ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সোনামসজিদ জিরোপয়েন্টে দুই দেশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা বৈঠক করেছেন। এ বৈঠক থেকেই সহসা এ বন্দর যোগাযোগের জন্য খূলে দেওয়ার আভাস মিলেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের সুবিধার্থে দ্রুত সব স্থলবন্দর দিয়ে ভিসা চালু হবে। একই সঙ্গে রাজশাহী এবং বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ভারতের আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীন বিমানের টিকেট চালুর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীস্থ ভারতের সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার।
তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সোনামসজিদ স্থলবন্দর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব শিগগিরই এটি খুলে দেওয়া হবে। তবে এর আগে গেদেও খুলে দেওয়া হতে পারে।
তিনি জানান, দুটি সীমান্ত রাজশাহী বিভাগের মানুষের সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং অর্থনৈতিক। এটি বন্ধ হওয়ার কারণে প্রবীণ নাগরিক এবং অসুস্থরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সোনামসজিদ স্থলবন্দরটি সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকায় আমদানিকারক-রপ্তানিকারক গ্রুপ তাদের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে উভয় পক্ষের ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
এ অবস্থায় নতুন সহকারী হাইকমিশনারের নেওয়া উদ্যোগ তাদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। সর্বশেষ সহকারী হাইকমিশনার সোনামসজিদ স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্টে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং উভয় পক্ষের আমদানিকারক রপ্তানিকারক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ৮০ শতাংশের বেশি সমস্যার সমাধান হয়েছে। ট্রাক চলাচল, পার্কিং, চালক, পণ্যের ওজন, ট্রাক চলাচলের সময়সহ আমদানিকারক-রপ্তানিকারকদের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। উভয় পক্ষ ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য জিরো পয়েন্টে সাপ্তাহিক অনানুষ্ঠানিক সংক্ষিপ্ত সভা আয়োজনে সম্মত হয়েছে। যাতে প্রকৃত ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়।
জানা গেছে, ভারতীয় পক্ষ যাত্রীদের চলাচলের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুটি সীমান্ত পুনরায় চালু করার জন্য চেষ্টা করছে। আশা করা হচ্ছে রাজশাহীবাসীর স্বার্থে বাংলাদেশ পক্ষও এটি পুনরায় চালু করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে।
রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারসহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির এসএমই সেক্টরগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনেরও ইঙ্গিত দিয়েছে। এই প্রথম ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন রাজশাহী বিভাগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সহকারী হাই কমিশনার বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা করেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতীয় ভিসা পাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য খুবই সহজ এবং ভারতীয় ভিসা পাওয়ার জন্য কোনও চিন্তা করার দরকার নেই। তিনি চিকিৎসা বা ভিসার জন্য কোনো এজেন্ট/দালালের কাছে না যাওয়ারও পরামর্শ দেন।
এর আগের সপ্তাহে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছিলেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার। ওইদিন সোনামসজিদ পরিদর্শনকালে তিনি চেকপোস্টের কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিজিবি ও বিএসএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবিধ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সেসময় তিনি সোনামসজিদ ও মোহদিপুর বর্ডার চালুর জন্য সকলের মতামত নেন।
নবনিযুক্ত সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা গেদে বর্ডার ও সোনামসজিদ বর্ডার খোলার বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই পদক্ষেপের কারনে অবশেষে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর বন্ধ বন্দর খুলে দেওয়ার আভাস মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে সবধরনের ভিসা চালু হয়। খুলে দেওয়া হয় দুই দেশের বেশ কয়েকটি ইমিগ্রেশন রুট। কিন্তু এখনো বন্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন রুট। গুরুত্বপূর্ণ এই রুট বন্ধ থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের বাসিন্দাদের বহুপথ ঘুরে বিমানে অথবা বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই অঞ্চলের ভারতগামী যাত্রীদের।
রাজশাহী অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি চলমান থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এতে শুধুমাত্র ভারত থেকে পাসপোর্ট যাত্রীরা এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে দেশে আসতে পারছেন। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে সমস্যার কারণে এই রুট ব্যবহার করে ভারতে যেতে পারছেন না বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধের কারণে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। আগে ভারতে গিয়ে মালামাল দেখে আমদানি করা হতো। কিন্তু এখন আর তা হয় না। এতে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন রুটের যাত্রীরা বলছেন, সকালে রাজশাহী থেকে বের হয়ে দুপুরের আগেই ভারতের মালদহ শহরে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে ভারতের যে কোনো জায়গায় যাওয়া সহজ। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মালদা স্টেশন, ভারতের যে কোনো শহরের সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যুক্ত। যোগাযোগ সুবিধার কারণে সোনামসজিদ-মহদিপুর পথে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর যাত্রীরা সহজেই ভারতে আসা-যাওয়া করতেন।
জানা গেছে, এ অঞ্চলের মানুষ বেশীর ভাগ চিকিৎসার জন্য বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েন। বেনাপোলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় ইমিগ্রেশনে লাইনে দীর্ঘক্ষন দাঁড়াতে হয়। এ অবস্থায় সোনামসজিদ-মহদীপুর বর্ডার খুলে দিলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে।