সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার
আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী। আমের নগরীতে গেলো বছরের মতো এবারও মাঘের শেষ ও ফাল্গুনের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরে উঠেছে আমবাগান। নগর কিংবা গ্রাম, আম গাছের নিকটবর্তী হলেই মিলছে মুকুলের মৌ-মৌ সুবাস। তবে গেলো বারে গাছভর্তি মুকুল আসলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে হতাশায় ডুবেছিলেন আম চাষী ও বাগান মালিকেরা। তাই এবার বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও চাষীদের মনে রয়েছে শঙ্কা ও উৎকন্ঠা। তবে, কৃষি দপ্তর বলছে- আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে গেলো বছরের থেকে এবছর বাম্পার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার গাছে গাছে দেখা মিলেছে ভরপুর স্বর্ণালী মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে প্রতিটি আম গাছের মাথা নুয়ে পড়ার উপক্রম। মৌমাছিরাও ব্যস্ত সময় পার করছে মধু আহরণে। মুকুলের সমারোহ দেখে অত্যন্ত প্রফুল্ল আম চাষিরাও। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ ভোরের দিকে ঘন কুয়াশায় হওয়ায় কিছুটা ভয়ে কাটছে আম চাষিদের দিন। কারণ, ঘন কুয়াশায় আমের মুকুলের ক্ষতি করে বিভিন্ন রোগব্যাধি। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ মৌসুমে আমের আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ১১.১৪ মেট্রিক টন এবং মোট উৎপাদন হয়েছিলো ২ লক্ষ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন।
এবার জেলায় আবাদ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৯১ হেক্টর। তবে উৎপাদন লক্ষমাত্রা আগের তুলনায় আরও বাড়বে বলে জানানো হয়। কারণ গত বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্পানের কারণে প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ ফলন কম হয়েছিল। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন অনেক কৃষক। তবে এবার ঝড় কিংবা অতিবৃষ্টির সম্ভবনা নেই। আর তীব্র দাবদাহ থেকে গাছের মুকুল ও গুটি বাঁচাতে চাষীদের পূর্বপ্রস্তুতি ও কৃষি সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানিয়েছে রাজশাহী সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মহানগরীর উপকন্ঠ নওহাটা এলাকার বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম ইরান। দেড় যুগ ধরে আমের ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রথমদিকে গাছে এতো মুকুল এসেছিল তা বলার মতো না। কিন্তু আফসোস মুকুল টেকেনি। প্রথমদিকে ঝড়-বৃষ্টি আর পরে রোদ্রের প্রচন্ড তাপে ঝরে পড়েছে মুকুল ও গুটি আম। ঔষধির ব্যবহার আর পানির প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি। তবে এবছরও গতবারের মতো আবহাওয়া পবিপর্যয় ঘটলে আমাদের হা-হুতাশ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।’
‘তাই আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিচর্যা নিচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ও ফল গবেষণার কৃষিবিদদের সাথে কথা বলছি। তাদের সহায়তায় কুয়াশাজনিত রোগবালাই থেকে বাঁচতে কীটনাশক সহ কিছু ঔষধ গাছে ছিটানো কাজে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে আপাতত মনটাও বেশ ভালো। আর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, আগের মতো আবহাওয়া পবিপর্যয় যেনো না ঘটে।’
গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের আকবর আলী জানান, ‘এবার গাছে বেশ ভালো মুকুল এসেছে। গুটিও হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু মনে মধ্যে কাজ করছে শঙ্কা। গতবারের মতো ঝড়-বৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহ হলে গাছে মুকুল থাকবে না। লাভের আশা রোদ এবং ঝড়-বৃষ্টির পানিতেই ভেসে যাবে।’
তবে আমের মুকুলের সঠিক পরিচর্যার করলে রোগব্যাধিসহ অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে ওঠার সম্ভব বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, কুয়াশা খুব বেশি হলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে রোগ হতে পারে। এ রোগের কারণে প্রথমে মুকুল সাদাসাদা হয়ে পড়ে কালো বর্ণ ধারণ করে ঝরে পড়ে। দীর্ঘদিন কুয়াশা অথবা হপার পোকার আক্রমণে মুকুলে সটিবল বা কালো আস্তরণ পড়ে থাকে। এ থেকে রোধ পেতে সালফার জাতীয় ফাংগিসাইড যেমন- থিউবিট, কমোলাস নামের ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা থেকে রক্ষা মিলবে।’ রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ‘কয়েকদিন যাবৎ রাজশাহীতে ভোরে ঘন কুয়াশা হলেও এতে খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ, গাছের ঠিকমতন পরিচর্যা নিলে মিলডডিউ ও বিভিন্ন ভাইরাসজনিত আক্রমণ থেকে রক্ষা সম্ভব। তাছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে। তাছাড়াও কৃষি সম্প্রসারনের মাধ্যমে সরকারও কৃষকদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পূর্বের চাইতে অধিক লাভের মুখ দেখবেন আম চাষিরা।’
সানশাইন/টিএ