শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর তানোরে ছবিসহ কুরুচিপূর্ণ কথা লিখে অজ্ঞাত একব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেন। এরই সূত্রধরে সন্দেহের বসে উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র ছাড়াও ৬ জন নামধারী প্রভাবশালীরা এক শারীরিক প্রতিবন্ধী নেতাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছেন। এঘটনায় ওই প্রতিবন্ধী নেতা সামশুল আলম বাদী হয়ে গত (৩ ফেব্রুয়ারী) শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় তানোর থানায় একটি মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-৩। কিন্তু এরির্পোট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শি সূত্রে জানা গেছে, ‘তানোরের উন্নয়ন’ নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডি থেকে মুন্ডুমালা পৌরসভার বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমান ও সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী ও ভাতিজার ছবিসহ কুরুচিপূর্ণ কথা লিখে অজ্ঞাত একব্যক্তি ছবিসহ একটি পোষ্ট দেন। কিš‘ এমন কুরুচিপূর্ণ ওই ফেসবুক পোষ্টটি প্রতিবন্ধী শামসুল আলমের আইডি থেকে হয়নি বলে নিশ্চিত হয়ে জব্দকৃত মোবাইল ফোন ঘটনার দিন রাতে শামসুল আলমকে ফেরৎ দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এমন আইডি কে কোথায় থেকে ব্যবহার করছেন তা গোপনে ও প্রকাশ্যে অনুন্ধানে মাঠে নেমেছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
এরই সূত্র ধরে সামশুল আলমের ওপর সন্দেহের বসে তানোর উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী ও বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমান তার দলবল নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবন্ধী সামশুল আলমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে বেধড়ক কিল ঘুষি ও লাথি মেরে রক্তাক্ত গুরুত্বর জখম করে। এঘটনায় শামসুল আলমের দামি মোবাইল ফোন ভেঙ্গে যায় ও নগদ টাকা খোয়া গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার চিনাশো মহল্লার বাসিন্দা আলহাজ্ব ইউসুফ আলীর পুত্র জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও আস্থা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি শারীরিক প্রতিবন্ধী শামসুল আলম (৫০) গত ১ (ফেব্রুয়ারী) বুধবার দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে মুন্ডুমালা বাজার হতে তানোর সদরে আসার উদ্দেশ্যে অটো গাড়ীতে চড়েন।
এসময় মুন্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়ি ও মুন্ডুমালা মহিলা কলেজ প্রবেশ মোড় নামক স্থানে ওই চলন্ত অটোগাড়ীটি পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পথরোধ করেন মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র এমপি ফারুক চৌধুরী বিরোধী সাবেক আ.লীগ নেতা প্রকাশনগর মহল্লার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মাদ আলী মাহামের পুত্র গোলাম রাব্বানী (৫৬)। পরে তিনি শামসুল আলমের সার্টের কলার ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন এবং তাকে এলোপাথারী কিলঘুষি মেরে অটোগাড়ী হতে নামানোর চেষ্টা করেন তিনি।
এহেন পরিস্থিতিতে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও মুন্ডুমালা সাদিপুর মহল্লার বাসিন্দা মৃত সাইনাল হকের পুত্র সাইদুর রহমান (৫২) ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুলের চোখ অন্ধ করবার উদ্দেশ্যে পাথরের আংটি পরিহিত হাতদ্বারা চোখ বরাবর সজোরে ঘুষি মারেন। মেয়রের এহেন আঘাতে শামসুলের ডান চোখের নিচে মারাত্মক গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম হয়। পরে মেয়র সাইদুরের ছেলে মনিরুল ইসলাম সাদ (৩০) তার হাতে থাকা ধারালো চাকু শামসুলের শরীরে ঢুকানোর জন্য আঘাত করে। এতে তার শরীরে শীতের মোটা পোশাক তথা কোর্ট কেটে যায়। কিন্তু অলৌকভাবে প্রাণে রক্ষা পায় প্রতিবন্ধী শামসুল আলম।
এহেন সময় রাব্বানী ও সাইদুরের হুকুমে সন্ত্রাসি কায়দায় সাদিপুর গ্রামের জুয়েল রানা (৩০), অপূর্ব হালদার (৩০) ও গয়ানাথ কর্মকার (৩০) মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি ভাবে মারপিট করেন। ফলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলা, ফুলা ও কালশিরা জখম হয়। তাৎক্ষণাৎ খবর পেয়ে মুন্ডুমালা তদন্ত কেন্দ্র হতে পুলিশ এসে শামসুলকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ঘটনার সময় শামসুলের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। কিš‘ পরে মোবাইল চেক করে মেয়রের অভিযোগের কোন সত্যতা না পেয়ে ওইদিন রাত ৮টার দিকে শামসুলকে মোবাইল ফেরৎ দেয় পুলিশ।
এবিষয়ে শামসুল আলম বলেন, মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র রাব্বানী ও বর্তমান মেয়র সাইদুর এলাকার বেশ প্রভাবশালী। তারা সন্দেহের বসে অন্যায় ভাবে সন্ত্রাসি কায়দায় আমার ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে। আমি ঘটনার সত্যতা প্রমানের জন্য পিবিআই তদন্তের জন্য অনুরোধ জানাই।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত পক্ষে আমি আমার ফেসবুক আইডি হতে ওই ধরণের কোন পোষ্ট করিনি। সঠিক ভাবে তদন্ত করা হলে সত্যতা পাওয়া যাবে। ফলে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক দেশের প্রচলিত ও প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসেন জুরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন শামসুল হক।
এব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে গোলাম রাব্বানী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি শামসুল আলমকে থাপ্পর দিয়েছেন। ওই সময় জনতা উত্তেজিত হয়ে তাকে মারপিট করেছে বলেও জানান তিনি।
মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, শামসুল আলম বেশকিছু ফেক ফেসবুক আইডি খুলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময় আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ কথা লিখে পোষ্ট দিয়ে আসছেন। এসব কারণে তাকে শিক্ষা দিতে রাগে ও ক্ষোভে মারধর করা হয়েছে।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ঘটনা নিয়ে আহত প্রতিবন্ধী শামসুল আলমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানান ওসি।
সানশাইন/ শামি