মিঠুনের ফিফটিতে সাকিবদের হারিয়ে দিল ঢাকা

স্পোর্টস ডেস্ক: ডাগআউটের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন মোহাম্মদ মিঠুন, হাত তুলে দেখালেনও কিছু একটা। হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়েও স্পষ্ট ফুটে উঠল তার হাসিটুকু। চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ, ওপরের দিকে তাকিয়ে হয়তো সেই স্বস্তিটুকুই বোঝাতে চাইলেন। অবশেষে ফিফটির দেখা মিলল!
এমন কোনো বড় ইনিংস নয়। কাজ শেষ করেও ফিরতে পারেননি। তবে আসরে দশম ম্যাচ খেলে প্রথম ফিফটির স্বাদ অন্তত পেলেন মিঠুন। বরিশালকে হারিয়ে চমকে দিল তার দল ঢাকাও। বিপিএলের ম্যাচে সিলেটে ফরচুন বরিশালকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিল ঢাকা ডমিনেটর্স।
এমনিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে অঘটন বা চমক বলে তেমন কিছু নেই। তবে এই টুর্নামেন্টে দুই দলের যা বাস্তবতা, তাতে ঢাকার জয় অনেকটা ছিল অপ্রত্যাশিতই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ১৫৭ রান তাড়ায় ঢাকার জয়ের ভিত গড়ে দেন মিঠুন। টানা ব্যর্থতার পর টুর্নামেন্টে প্রথমবার ওপেন করতে নেমে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান খেলেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস।
মিঠুনের সঙ্গে সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিই ঢাকাকে এগিয়ে নেয় লক্ষ্যের প্রায় অর্ধেক পথ। আগ্রাসনের শুরুটা করেন সৌম্য। দ্বিতীয় ওভারে চোখজুড়ানো এক শটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কায় ভাসিয়ে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিমের বল। পরের ওভারে দুটি চার মারেন সাকিব আল হাসানকে।
মিঠুন শুরুতে ছিলেন অনেকটা পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। ৫ ওভার শেষে তার রান ছিল ১৮ বলে ১৮। পরের ওভারে বদলে যায় তার রূপ। সৈয়দ খালেদের টানা তিন বলে মারেন দুটি ছক্কা ও এক চার। প্রথমটি সোজা ব্যাটে নান্দনিক শটে, পরেরটি পুল শটে, শেষটি কাট করে। আরেক পাশে সৌম্য ছক্কা-চারে বোলিংয়ে স্বাগত জানান সানজামুল ইসলামকে।
৭৪ রানের জুটি ভাঙে নিরীহ এক বলে সৌম্যর বিদায়ে। করিম জানাতের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে হালকা ব্যাট ছুঁইয়ে তিনি উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ২২ বলে ৩৭ রান করে। মিঠুন দলকে এগিয়ে নেন আরেকটু দূর। ফিফটি পূরণ করেন তিনি ৩৩ বলে। তিনে নেমে মিঠুনকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন। এবারের জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান করা তরুণ এই বাঁহাতি অবশ্য শুরুতে প্রান্ত বদলাতে ধুঁকছিলেন। তবে পরে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সানজামুলের বলে দুটি ছক্কায়। পরে আরেকটির চেষ্টায় তিনি আউট হয়ে যান ২১ বলে ২৬ রান করে।
সানজামুলের বলেই শেষ হয় মিঠুনের ইনিংস। ৬ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস খেলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অবশ্য বেশ অসন্তুষ্ট মনে হলো তাকে। তিনি ফেরার পর মিডল অর্ডারে সুবিধা করতে পারেননি অ্যালেক্স ব্লেইক, আরিফুল হকরা। তবে চারে নেমে ১৬ বলে অপরাজিত ২০ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন নাসির হোসেন।
ম্যাচের প্রথম ভাগে বরিশালের শুরুটায় ছিল বড় কিছুর ইঙ্গিত। চোট কাটিয়ে আসরের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারে ১২ রান নিয়ে শুরু করেন সাইফ হাসান ও এনামুল হক। এরপর একটু থমকে যান দুজনই। পরে আবার কয়েকটি বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লেতে দুজন তোলেন ৪১ রান। এরপরই একের পর এক উইকেটের পতন। নিজের পরপর দুই ওভারে সাইফ ও ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান আফগান স্পিনার আমির হামজা হোতাক।
এই দুজনের মাঝে বিদায় নেন সাকিব আল হাসানও। মুক্তার আলির লেংথ বল ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টা করেন বরিশাল অধিনায়ক, লং অফ সীমানায় শুরুতে বলের ফ্লাইট ধরতে না পারলেও পরে দারুণ ক্যাচ নেন আরিফুল হক। একটু পর নাসির হোসেনকে স্লগ করে বিদায় নেন ইফতিখার আহমেদও। ২৪ রানের মধ্যে বরিশাল হারায় ৪ উইকেট।
এনামুল তখনও পর্যন্ত এক প্রান্ত আগলে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। হুট করে সৌম্য সরকারকে রিভার্স সুইপ খেলে উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি ৩৫ বলে ৪২ রান করে। মাহমুদউল্লাহ উইকেটে যাওয়ার পরপরই একটি ছক্কা মারেন। তবে দলের বিপদ দেখেই হয়তো একটু গুটিয়ে ফেলেন নিজেকে। ২১ বল খেলে তার রান ছিল ২০। এরপর সালমান ইরশাদের বলে দারুণ এক পুল শটে ছক্কার পর টানা আরও দুই বল পাঠান বাউন্ডারিতে।
শেষটা তিনিও ভালো করতে পারেননি। শরিফুলের বলে কাভার সীমানায় ধরা পড়েন তিনি ২৭ বলে ৩৯ রান করে। করিম জানাত ক্রিজে গিয়ে ওই ওভারেই দুই ছক্কা ও এক চারে বিধ্বস্ত করেন শরিফুলকে। তার ৫ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে দলের রান পেরিয়ে যায় দেড়শ। তবে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি সেই স্কোর।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ | সময়: ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ