সর্বশেষ সংবাদ :

দুর্গাপুর পৌর আ’লীগের কমিটি আদৌ হবে কি?

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহী দুর্গাপুর পৌরসভা শাখা আওয়ামী লীগের কমিটি ও কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করার পর ১০ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কমিটি গঠনে এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা অমান্য করে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের। কমিটি না থাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছে বলেও অভিযোগ নেতাদের। তবে কি কারণে কমিটি গঠন করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না কোথাও।
২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজশাহীর জনসভাকে ঘিরে এই প্রশ্ন এখন আবার সরব হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
গত বছরের ১৩ মার্চ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার তাঁর ফেসবুক ওয়ালে কমিটি স্থগিত সম্পর্কিত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তবে কি কারণে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে তা বিস্তারিত লেখেননি। সেই থেকে আজও কমিটি স্থগিত রয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলনে সভাপতি পদে আজাহার আলী ও সাধারন সম্পাদক পদে শরিফুজ্জামান শরীফের নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেনের নির্দেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কমিটির সকল কার্যক্রম সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়।
গত বছরের ৯ মার্চ দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে আজাহার আলীকে সভাপতি ও শরিফুজ্জামান শরিফকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। তারপর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রবীণ ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে থাকেন। ঘোষিত কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা সুকুমার কবিরাজ।
অভিযোগে বলা হয়, নব-গঠিত কমিটির সভাপতি আজহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা দু’জনই বিদ্রোহী প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) আব্দুল মজিদের পক্ষে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ও নির্বাচনে নাশকতা কর্মকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগে তাদের দুজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছিলেন। এমনকি নির্বাচন চলাকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যেসব নেতা বিগত উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে আনা হবে না। এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা দলের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করতে ও নিজের রাজনৈতিক ভিত মজবুত করতে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই দুই নেতাকে সভাপতি ও সম্পাদক ঘোষণা দেন। সম্মেলনের পরদিনই আওয়ামী লীগ নেতা সুকুমার কবিরাজ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত আবেদন জানান।
কমিটি স্থগিতের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আদৌ কমিটি হবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। কি কারণে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা তার অনুসারীদের পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা দিতে গড়িমসি শুরু করেছেন। কমিটিতে পদ পাইয়ে দিতে মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন। ওই টাকা জায়েজ করতেই কমিট গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রেখেছেন তিনি। কেন্দ্র থেকে বারবার কমিটি গঠনের জন্য চাপ দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সেই নির্দেশনা মানছেন না জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্র থেকে কয়েক দফা জেলা আওয়ামী লীগকে চাপ দেয়া হয়েছে কমিটি গঠনের জন্য। কিন্তু সে নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন জেলা আওয়ামী লীগ। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল একাধিকবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার ফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ | সময়: ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর