সর্বশেষ সংবাদ :

দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবে ব্যয় সংকোচন নীতি: প্রধানমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা এবং বেশামাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যাতে দেশের মানুষ কষ্ট না পায়, সেজন্য অপ্রয়োজনীয় আমদানি পরিহার, ব্যয় সংকোচন, আর্থিক খাতে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সকলকে কৃচ্ছতা সাধাণ, অপচয় বন্ধ ও মিত্যবয়ী হওয়ার আহ্বানও জানান। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্েয এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০২২ সালে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ। এই যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জালানিসহ দ্রব্যমূল্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু আমাদের মতো দেশ না, উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।’
‘এই পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনীয় আমদানি পরিহার, ব্যয় সংকোচন, আর্থিক খাতে মনিটরিং জোরদার করে আমরা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে কোনেভাবেই দেশের মানুষের কষ্ট না হয়।’ তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সমস্যাসমূহ এবং এর উত্তরণের কৌশল নির্ধারণে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন’ কার্যকর ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।’
জেলা প্রশাসক সম্মেলন আয়োজন করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গৃহীত ‘রূপকল্প-২০২১’-কে সামনে রেখে ২০০৯ সালে আমাদের নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা আর সুসংগঠিত পরিকিল্পনা গ্রহণ করে আমরা অগ্রসর হয়েছি। বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এক অভূতপূর্ব রূপান্তর ঘটেছে।’
‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিগত ১৪ বছরে মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। জিডিপির আকার মাত্র ৭০ বিলিয়ন থেকে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির আগে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। মহামারি আঘাত হানার পর তা কিছুটা শ্লথ হলেও বর্তমানে তা ক্রমাগতভাবে আগের ধারায় ফিরে আসছে।”
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে আসা অর্থের প্রবাহকে প্রভাবিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬০ দশমিক নয়-সাত বিলিয়ন ডলার এবং ৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলারে।’
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রায় শতভাগ টিকা গ্রহণ উপযোগী মানুষকে কোভিড টিকা দেওয়ায় তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আমরা টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। গত বছর নভেম্বরে একসঙ্গে ১০০ সেতুর উদ্বোধন; ডিসেম্বরে একসঙ্গে ১০০ মহাসড়কের উদ্বোধন করেছি। খুব শিগগিরই চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’
‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৬টি মেট্রোরেল লাইন সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট-এর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। দ্রুত ও আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।”
পল্লী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণ ও তাদের স্বাবলম্বী করতে সরকারের উদ্েযাগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে পল্লী এলাকায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো নির্মাণ, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সব সুবিধা প্রদান ও নাগরিক জীবনের মান উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। পল্লী উন্নয়নে সরকারের এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং জেলা ব্র্যান্ডিং-এ আপনাদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
দক্ষ, আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ভূমি-ব্যবস্থাপনা ও ভূমিসেবা সহজীকরণের জন্য দেশের মোট ৪৮৮টি উপজেলা/সার্কেল এবং ৩,৫৪১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-মিউটেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলে এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা এসডিজিসহ আমাদের সব উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা যথাসময়ে অর্জন করতে সক্ষম হবো।
‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে সেই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ | সময়: ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ