সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারার হাতিয়ার বিল দখল করে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ, উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলে প্রভাবশালীরা জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে জমির মালিকদের চরম বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসূমে বিলে নতুন পানিতে মাছ ছাড়ার পূর্বেই তাদের হাত থেকে বিল উদ্ধারের জন্য ক্ষতিগ্রস্থরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভূক্তভোগীরা জানান, গত চৌদ্দ বছর ধরে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী হাতিয়ার বিলে মাছ চাষ প্রকল্পের নামে জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে। এতে বিলের চারপাশের পাঁচ গ্রামের জমির মালিকরা বঞ্চিত হচ্ছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের নিকট আবেদন করেন। প্রভাবশালীদের হাত থেকে হাতিয়ার বিল রক্ষার জন্য অচিরেই প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, হাতিয়ার বিলের জমির মালিকরা ন্যায্য পাওনা চাইতে গেলে প্রভাবশালীদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়ে অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিতে চাইলে প্রভাবশালীরা তা তোয়াক্কা না করে বিল দখল নিতে সন্ত্রাসী কায়দায় হাসুয়া, লাঠি, চাকু, দা নিয়ে এলাকার জোরদারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য বিলের চারি দিকে ২০/২৫টি মোটর সাইকেল নিয়ে শোডাউন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এতে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের চারপাশে হাট মাধনগর, বাঁইগাছা, সুজনপালশা, চন্ডিপুরসহ পাঁচটি গ্রাম। হাতিয়ার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্প নাম দিয়ে প্রভাবশালীরা জমি মালিকদের ঠকিয়ে এক যুগ ধরে সেখানে মাছ চাষ করে আসছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি তমেজ উদ্দিন এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন বিল দখলের জন্য একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলে জমি মালিকরা মাছ চাষ করতে না পারলেও যাদের জমি নাই এমন অনেক প্রভাবশালীও রয়েছে দখল কমিটিতে। সুজনপালশা গ্রামের মৃত মেজতুল্ল্যার ছেলে তমেজ উদ্দিন, মৃত শরিয়তুল্যার ছেলে আব্দুল মতিন, নরদাশ গ্রামের রফাতুল্ল্যার ছেলে সেকেন্দার আলী, রহিম বক্সের ছেলে রফিক উদ্দিনসহ কতিপয় প্রভাবশালী ওই বিলে জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে কৃষকরা বাধা দিলেও ওই এলাকার প্রভাবশালী ও তাদের পেটুয়াবাহিনী নরদাশ গ্রামের জোনাব আলী, আব্দুল মান্নান, ঝাফর আলী ও সুজনপালশা গ্রামের আফজাল হোসেনসহ বেশ কিছু লাঠিয়ালবাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় হাসুয়া, লাঠি, চাকু, দা নিয়ে এলাকার জোরদারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। এর আগে সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়েছেন নরদাশ গ্রামের মোবারক হোসেন, রফিকসহ অনেকেই। তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। প্রাণ ভয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকছে বলেও জানায় ভূক্তভোগীরা। সাবেক ইউপি সদস্য চন্ডিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী, সাবেক ইউপি সদস্য নরদাশ গ্রামের মুনছুর রহমানসহ কৃষক মজিবর রহমান, মোবারক হোসেন, হাটমাধনগরের দেলোয়ার হোসেন, আলামিন, সুজনপালসা গ্রামের আব্দুর রহিমসহ অন্তত চার শতাধিক কৃষক দখলকারীদের হাত থেকে বিলটি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন। নতুন ভাবে কৃষকরাই বিলে মাছ চাষ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।
হাতিয়ার বিল মাছ চাষ প্রকল্পের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন জানান, হাতিয়ার বিলের প্রায় আশি ভাগ জোতদার আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের ডিড করা আছে। চৌদ্দ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু ভাবে মাছ চাষ করে আসছি। কোন জোতদারের দাবী দাওয়া থাকলে বিভিন্ন দফতরে না ঘুরে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অথচ তারা আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে বিভিন্ন ভাবে দোষারোপ করে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুল জানান, বঞ্চিত কৃষকরা ইউনিয়ন পরিষদে সুষ্ঠু ফয়সালার দাবী জানিয়ে লিখিত আবেদন করলেও বিল দখলকারীদের বার বার নোটিশ করেও তারা উপস্থিত হয়নি। প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক মাছ চাষ করে আসছে।
বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুর রহমান জানান, ওই এলাকায় শান্তি-শৃংখলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিশৃংখলা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আবু সুফিয়ান জানান, হাতিয়ার বিল সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষকে শুনানীর জন্য আহ্বান করা হয়েছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ