মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে পলি পড়ায় আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে চর জেগে ওঠা এসব জমিতে এখন সারা বছর ধরে উৎপাদন করা হচ্ছে নানা প্রকার সবজি সহ অন্যান্য ফসল। যা স্থানীয় চাহিদা পূরনের পাশা-পাশি রপ্তানী করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
লোকজন জানান, এক সময় চরাঞ্চলের জমিতে শুধু ধান,গম,পাট আর আখ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে -আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান, কলা বাগান-সহ হরেক রকম সবজি চাষ। বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নদী বিধৌত চরাঞ্চলর জুড়ে লক্ষ্য করা যায় নানা রকম সবজি। যার ব্যাতিক্রম ঘটেনি এবারও। এ অঞ্চলের কৃষকরা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে নানা প্রকার সবজি চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি আমদানি করছে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সরেজিমন ঘুরে লক্ষ করা গেছে, উপজেলার নদী তীরবর্তী চকরাজাপুর ইউনিয়নের পলাশি ফতেপুর, দাদপুর, কালিদাসখালী, কলিগ্রাম, টিকটিকি পাড়া, করারি নওসারা, সরের হাট, চাঁদপুর এসব চরে এবার চাষ হচ্ছে আলু ,বেগুন, টমেটো, কফি, লাও, মিষ্টি কুমড়া, সিম, করলা, পুঁই শাক, সরিষা ও লালশাক-সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এরমধ্যে পেঁয়াজ ও রসুন চাষে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ইতোমধ্যে নতুন পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। এবার আশানুরুপ ফল পাচ্ছে কৃষকরা।
পলাশি ফতেপুরের কৃষক আনোয়ার শিকদার জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে শীত কালিন সবজি হিসাবে কফি এবং বেগুন চাষ করছেন। এ গুলো আবাদের পূর্বে জমিতে লাঙলের পরিবর্তে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে। এর ফলে চাষাবাদের খরচ কমেছে। এ ছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যায়।
তিনি জানান, শ্যালোমেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম এবার বেশি হওয়ায় সেচ খরচ কিছুটা বেশি পড়ছে। তবে চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। এর ফলে চাষিরা ফসল চাষ করে লাভবান হন।
অপর একজন কৃষক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, তিন বিঘা জমিতে রসুন,এক বিঘা জমিতে লাউ, দুই বিঘা জমিতে বেগুন,এক বিঘা জমিতে মুলা এবং দুই বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছেন। এদিক থেকে সবচেয়ে পেঁয়াজ এবং রসুনে ভাল ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন শুধু আমি নয়, আমার মতো চরাঞ্চলের সকল কৃষকই বর্তমানে নানা অর্থকারি ফসলের পাশা-পাশি সবজি চাষ করছেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান জানান, চরাঞ্চলকে দেখলে এখন আর চর মনে হবে না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণ আম বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটছে। বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নানা প্রকার সবজি উৎপাদনে রেকর্ড ভঙ্গ করছে এই ইউনিয়ন। বর্তমানে শীত শুরু হওয়ার পর থেকে সবজি’র কমতি নেই চরাঞ্চলে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যে কোন ফসল বেশি পরিমান চাষাবাদ হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের মাঝে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তাঁর মতে, গত কয়েক বছর ধরে সবুজের নীরব বিপ্লব ঘটেছে পদ্মার চরাঞ্চলে। উপজেলার সমতল এলাকার ৬ ইউনিয়ন এবং দুই পৌর সভা মিলে যে পরিমান সবজি চাষ না হয়, তার চেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নে। তিনি মাঝে মধ্যে এ সকল ফসল পরিদর্শনে যান এবং কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও উল্লেখ করেন।
সানশাইন / শামি