বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারায় কোটি টাকা মূল্যের একটি বিবাদমান জমি দখল করতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলায় জমির প্রকৃত মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষককে পুলিশ চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফকার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। জমির মালিকের অন্য স্বজনদেরও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা পালিয়ে থাকার সুবাদে প্রভাবশালী নির্বিঘ্নে জমি দখল করে ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে আসামিদের পক্ষে গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমির মালিক তোজাম্মেল হক একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ভবন নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা বন্ধ করা হয়নি। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ পুলিশ প্রভাবিত হয়ে মামলা নিয়ে হয়রানি করছে এবং প্রভাবশালীকে জমি দখলে সহযোগিতা করছে।
জমির দখলদার কামরুজ্জামান স্থানীয় ‘তোরা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
হয়রানীর মামলায় গ্রেফতার হওয়া অবসরপ্রাাপ্ত স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বলেন, পুলিশ কোনো তদন্ত ছাড়াই একটি সাজানো চাঁদাবাজির মামলা নিয়ে তাঁর বৃদ্ধ স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। একজন বৃদ্ধ মানুষ কীভাবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এটা পুলিশ একবারও ভাবেনি। উল্টো গ্রেফতার করে প্রভাবশালীকে জমি দখলে নিতে সহযোগিতা করছে। পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি।
ভূক্তভোগীর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, উপজেলার হাসনিপুর বাজারে প্রায় কোটি টাকা দামের জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে জামালপুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তোজাম্মেল হক ভোগ দখল করে আসছিলেন। তবে স্থানীয় গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম জমিটি নিজের বলে দাবি করে কয়েক দফা দখলের চেষ্টা করেন। তিনি বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পেরে দখলে নিতে ব্যর্থ হন। তবে আওয়ামী লীগের নেতা শামসুল ইসলামের কাছ থেকে বিবাদমান সাড়ে ছয় শতাংশ জমি প্রভাবশালী কামরুজ্জামান কিনে নিয়েছেন বলে দাবি করে তিনি এবার দখলে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। প্রতিপক্ষ বাধা দিতে পারে এমন আশংকায় তিনি গত ৭ জানুয়ারি বাগমারা থানায় ১০ লাখ টাকার চাঁদাদাবির অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তোজাম্মেল হকসহ তাঁর আট স্বজনদের আসামি করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পরেই পুলিশ স্কুল শিক্ষক তোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পুলিশ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলে তাঁরা আত্নগোপনে চলে যান। এ সুযোগে কামরুজ্জামান ভাড়াটে লোকজন দিয়ে বিবাদমান জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল ইসলাম দাবি করেন, জমিটির বৈধ মালিক তিনিই। তবে দখলে নিতে পারেননি। এজন্য বিক্রি করেছেন। তোজাম্মেল হকের ভাই সামসুল হক বলেন, ওই সম্পত্তি অনেক আগেই আমরা ক্রয় করি। প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। হঠাৎ করে কামরুজ্জামান রাতারাতি ওই জমিতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভবন নির্মানের কাজ শুরু করে। সাজানো অভিযোগে মামলা দেওয়ার কারণে তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এ সুযোগে জমিটি দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন প্রভাবশালী।
বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আদালতের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার আদেশ তাদের কাছে পৌঁছেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়ার পরেই মামলা নথিভূক্ত করে আসামিকে গ্রেফতার করেছে।