সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

স্টাফ রিপোর্টার : ঝলমলে রোদের কারণে গেল দুদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ফের শুরু হয়েছে মাঝাড়ি শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি হিমেল বাতাসও বইছে উত্তরের এ জেলায়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্¥ তাপমাত্রা রিকর্ড করা হয়েছে বুধবার। এদিন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত দুদিন তাপমাত্রা বাড়লেও বুধবার জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক হেলেন খান বলেন, রাজশাহীতে বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যদিও তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কাও রয়েছে।
এদিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে জেলায় জবুথবু অবস্থায় রয়েছে মানুষ। ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলছে যানবাহন। সকাল থেকে রাস্তায় লোকজনের চলাফেরাও কম দেখা গেছে। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বেলা ১২ টার পর আকাশে ঝলমলে রোদের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছেন মানুষ।
তীব্র শীতে কাহিল মানুষ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। অনেকে ভিড় করছেন গরম কাপড়ের দোকানে। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার তাগিদে বের হয়ে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন।
শীতের হাত থেকে রেহাই পেতে পথের ধারে ও খোলা স্থানে ছিন্নমূল মানুষদের খরকুটোয় আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আগুনের পরশে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন হতদরিদ্র মানুষ। হঠাৎ করে আবারও শীত বেড়ে যাওয়ার বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপও।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, শীতজনিত কারণে রোগির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে নবজাতক শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও বয়স্করাও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
১৮ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ : এদিকে শীত আরও বেড়ে দেশের ১৮ জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা আরও কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করতে পারে, একই সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার পাবনা, নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ ১১ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। বুধবার পুরো রাজশাহী বিভাগেই শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল পঞ্চগড়ে। বুধবার সেখানে এ তাপমাত্রা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি।
বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি থেকে কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। যশোর ও চুয়াডাঙ্গা এবং রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলা ও রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ ১৮ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত পারে বলেও জানান মনোয়ার হোসেন।
তিনি আরও জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামী দু-দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
গরম কাপড় কিনতে ফুটপাতের দোকানে ছুটোছুটি : এদিকে মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা থেকে জানান, শীতে জবুথবু অবস্থা। হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সূর্য মামার দেখা মিলছে না বেলা ১২টা নাগাত। এই কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়েছে তৃণমূল কেটে খাওয়া লোকজন। সকাল হলে তাদের ঘরের বাইরে বের হতেই হচ্ছে। তা না হলে ঘুরবে না জীবনের চাকা।
জীবনের চাকা ঘুরাতেই এসব ছিন্নমূল লোকজনকে প্রচণ্ড শীত উপক্ষো করে বের হতে হচ্ছে ঘরের বাইরে। তাই তো এসব তৃণমূল লোকজন শীত নিবারনের আশায় অল্প টাকার মধ্যে ফুটপাতকেই বেছে নিচ্ছেন। তাই তো শীত যত প্রকট হচ্ছে ভবানীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেড়েই চলেছে। এখানে অল্প টাকার মধ্যে পরিবারের সবার জন্য শীতের পোশাক মিলছে।
ভবানীগঞ্জ হাইস্কুল রোডের ফুটপাতে অল্প দামে মিলছে রকমারি শীতের পোশাক। এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তারা ব্যাপক হারে শীতের পোশাক আমদানী করেছেন। দাম পূর্বের মতই আছে। তবে নতুন নতুন কিছু পোশাকের দাম সামান্য কিছু বেড়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত আট নয়টা পর্যন্ত এসব দোকানে কেনাকাটা চলে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার বারশ টাকার মধ্যে এখানে রকমারি শীতের পোশাক পাওয়া যায়। শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ সব বয়সীদের জন্য সস্তায় পাওয়া যায় শীতের পোশাক।
মাড়িয়া গ্রামের রফিক পেশায় ভ্যান চালক। তিনি স্ত্রী সন্তান সহ এসেছেন শীতের পোশাক কিনতে। রফিক জানান, ৫শ টাকা এনেছেন। এর মধ্যেই তিনজনের শীতের তিনটি পোশাক কেনা হয়েছে। কিছু টাকা বেচেছে। তিনি ওই টাকা দিয়ে একটি কানটুপি কেনার জন্য চেষ্টা করছেন।
সুমি আক্তার নামে এক কলেজ চাত্রী জানান, তিনি এখান থেকে তিনশ টাকা দিয়ে তার ভাইয়ের জন্য একটি জ্যাকেট কিনেছেন। আজ তার নিজের জন্য একটি সোয়েটার কিনতে এসেছেন। এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আরো জানান, এখানে পৌরসভা থেকে তাদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। টিনসেড ঘরে কোন রকমে তারা ব্যবসা করছেন। এখানে টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতা সাধারণ সহ তাদের নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয়।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ