রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে জনরোষে হামলার শিকার হয়ে সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী আহত হবার ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে তার কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে কর্মরত সকল নকলনবীশরা তালাবদ্ধ কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়েছে।
অপরদিকে দলিল লেখক সমিতি তাদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে। এতে করে এখানকার সব ধরনের দলিল নিবন্ধন ও লেখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা ২ দফা তাদের সদস্যদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেও তাদের সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানো হয়নি। আর এ ঘটনায় থানায় কোন মামলাও হয়নি।
ঘটনার প্রায় চার মাস আগে শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকরা সাব রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন অনিয়ম, হয়রানী এবং দলিল আটকে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবী সহ বিভিন্ন দাবীতে দীর্ঘ ৩ মাস কর্মবিরতি পালন করার অভিযোগ করলেও হামলার পরদিন এ নিয়ে কোন দলিল লেখক কোন কথা বলতে রাজি হননি। সেসাথে এ হামলা ঘটনার সাথে তারা জড়িত নয় বলেও দাবী করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, মঙ্গলবারের ঘটনায় মামলা ও হয়রানির ভয়ে সংশ্লিষ্টদের কেউ মুখ খুলছেনা। এ ব্যাপারে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক সিলু জানান, ঘটনার সময় তিনি দলিল লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে জানতে পারেন তাদের সাব রেজিস্ট্রার মারধরের শিকার হয়েছেন। খবর পেয়ে তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান।
সাব-রেজিস্ট্রারের উপর তাদের পূর্বের রাগের জেরে এ ঘটনা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি, জানান, তার সমিতির কোন সদস্য এ ঘটনার সাথে জড়িত হয়। বহিরাগতরা এসে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
অন্যদিকে সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মরত নকলনবীশরাও ভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তবে তারা ঘটনার সম্পর্কে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
নকলনবীশদের সভাপতি সারওয়ার জাহান জানান, মঙ্গলবার তাদের সাব রেজিস্ট্রারকে মারধর করা হয়েছে তাই তাদের কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে কর্মবিরতি চলছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার নাই, তাই তাদের কাজও বন্ধ আছে। এ সময় তিনি বাইরে আছেন বলে ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।
অপরদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার বজলার রশিদ সনু জানান, দলিল লেখকদের হয়রানির জের এবং ভুক্তভোগী এক মহিলা ১৫ মাস ধরে তার স্বামীর পেনসনের টাকা ছাড় করার বিষয় নিয়ে সৃষ্ট জনরোষ থেকে সাবরেজিস্টারের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, অসহায় এক মহিলা তার স্বামীর পেনশনের টাকা ছাড় করার জন্য ১৫ মাস ঘোরার পরও কাজ না হলে উপজেলা একাউন্টস অফিসারের কাছে বিষয়টি শোনার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অন্য অফিসারদের নিয়ে তার কার্যালয়ে গিয়ে দ্রুত পেনশনের কাজটি নিষ্পত্তি করতে বলে চলে আসার ২ ঘণ্টা পর হামলার ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও জানান, সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দলিল লেখক, ডাক্তার সহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের দলিল আটকে হয়রানি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর জের ধরেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারও একই ধরনের অভিযোগ এনে জানান, উপজেলা আইনশঙ্খলা সভা সহ বিভিন্ন ভাবে ঐ সাব -রেজিস্ট্রারকে একাধিক বার সর্তক হবার আহবান জানানো হলেও তিনি বেপরোয়া আচরন করতেন।
বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি দাবী করেন, ভুক্তভোগী মহিলাকে নিয়ে দুপুরে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ঐ মহিলার কাজটি দ্রুত সমাধানের আহবান জানিয়ে চলে আসার প্রায় ২ ঘণ্টা পর তার অনুপস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা অবগত রয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি বলে শিবগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ চৌধুরি জোবায়ের হোসেন নিশ্চিত করেন।
অপরদিকে বিষয়টি জানতে একাধিকবার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম ও মহাসচিব এস এম শফিউল বারী স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে ইউসুফ আলীকে তার এজলাস কক্ষে দায়িত্ব পালনের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ও তার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হামলা করে মারাত্মকভাবে জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেসাথে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত সকল সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জেলা রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের একটি প্রতিবাদ লিপি দিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত: মঙ্গলবার দুপুরে শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক এক কর্মচারী অবসরে যাবার পর মারা গেলে তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তানের অনুকুলে পেনসনের টাকা প্রাপ্তির সুপারিশের জন্য শিবগঞ্জ সাব রেজিস্টার ইউসুফ আলীর কাছে সমাধান না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট যান।
প্রায় ১৫ মাস ধরে ঘুরেও কোন সুরাহা না মেলার বিষয়টি উপজেলা একাউন্স অফিসারের কাছে অবগত হয়ে তাকে সহ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে সাবরেজিস্ট্রারের এজলাসে গিয়ে দ্রুত কাজটি সুরাহা করার আহ্বান জানিয়ে চলে আসার প্রায় ২ ঘণ্টা পর তিনি হামলায় শিকার হন। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়।