রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
শাহ্জাদা মিলনঃ
অক্ষয় ভগত। বয়স ২৪। ভারতের পশ্চিম বাংলার পুরুলিয়া জেলার গুরদা গ্রামে। অনেকটা পাহাড়ি এলাকা। সেখানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এ মানুষটি স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়ে ভ্রমনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন পায়ে হেটে পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখবেন। তবে এক সময় সিদ্ধান্ত নেন বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরলে সেটি আরো কার্যকর হবে। সেই শুরু, এবার তার সঙ্গী একটি সাইকেল ও কয়েকটি কাপড়।
গত ২১ দিন আগে বাংলাদেশের যশোর বেনাপোল বর্ডার হয়ে মাগুরা,চুয়াডাঙ্গা,ঝিনাইদহ,কুষ্টিয়া,নাটোর,পাবনা হয়ে রবিবার বিকেলে রাজশাহীতে এসেছেন। তিনি জানান পুরো দেশ ঘুরে সবশেষে ঢাকায় যাবেন। অক্ষয় ভগত বাংলাদেশে আসার কারন হিসেবে ভাষা ও সংস্কৃতি আদান প্রদান,পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেয়া,বিশ্বের প্রতিটি দেশে একটি করে গাছ লাগানোসহ কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে বাংলাদেশে আসলেও মূলত এদেশকে কাছ থেকে ঘুরে দেখা ও আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শহীদ মিনারে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই দেশের ভাষার যে একটা সাংস্কৃতিক মিলন হবে সেখানে স্বাক্ষী হতে চান। এর পর তিনি আবার ভারতে চলে যাবেন এবং সর্বশেষ আফ্রিকার তানজেনিয়াতে ভ্রমণ শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করবেন।
তিনি কেনিয়া, উগান্ডা, তানজেনিয়া, রাওয়ান্ডা ঘুরে আরেকটি দেশে যাওয়ার সময় বাড়িতে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় তিনি দেশে ফিরে যান তবে তার ই”ছা ছিলো পুরো পৃথিবীর অন্তত ১০০ দেশ ঘুরে বাংলাদেশ হয়ে নিজ দেশে ফিরে যাবার। স্পন্সার বিহীন নিজের জমানো টাকা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় এত দূর পথ পাড়ি দেয়ার ইচ্ছা জানান ভ্রমণপ্রিয় অক্ষয়। ভগত জানান, বাংলাদেশ অসাধারন দেশ। এখানে ঢোকার পর এখন পর্যন্ত একটি টাকা খরচ হয়নি তার। যেখানে যাচ্ছেন আতিথিয়েতায় মুগ্ধ করছে সবাই। এমনকি রাতেও বিভিন্ন এলাকায় মানুষ নিজের বাসায় নিয়ে রাখছেন। তিনি জানান, ছোট থেকে যখন বই বা কবিতা পড়তাম সেখানে দেখেছি বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,নাটোরের বনলতা সেন এগুলো পড়তে পড়তেই মূলত বাংলাদেশকে মন থেকেই ভালোবেশেছি অনেক আগ থেকেই। পৃথিবী ঘুরে দেখার অনুপ্রেরণার বিষয়ে জানান,বই পড়ে আসলে কুয়োর ব্যাঙ এর মতো জানতে বা শিখতে চাইনি। এর বাইরে যে বিশাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি মানুষের ভাব আদান প্রদান,দেশের সৌন্দর্য্য দেখতে চাই। যত বেশি ঘুরবো ততো বেশি জানবো এবং যাদের সাথে মিশবো তাদের সকলকে নিজ দেশের ভাষা সংস্কৃতি জানাতে চাই।
পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে কোন বার্তা দিতে চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অক্ষয় জানান মনুষ্য জাতির অস্তিত্ব রক্ষাত্বে ভবিষ্যত প্রজন্মের বসবাসের নিশ্চয়তার জন্য যেনো আমরা পরিবেশকে রক্ষা করি, সারা বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই মূল চাওয়া। তিনি জানান,ভ্রমণ বিষয়ে তার মা-বাবার অবদান অনেক বেশি। কারন তাঁরা তাকে বাঁধা দেননি। প্রথমদিকে যখন ভারতবর্ষ ঘুরতে বের হন তখন তার ভেবেছিলো আর হয়তো ছেলে ফিরবে না কারণ ভারত তো বিশাল দেশ। তবে আমি ফিরেছি। তিনি প্রথম ভ্রমণ শুরু করেন ২০১৮ সালের ৫ মার্চ। পকেটে মাত্র ২০০০ রুপি আর বাই সাইকেল নিয়ে। বাড়ি থেকে প্রথম ভ্রমণে বের হন নিজ জেলা পুরুলিয়া হয়ে ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যেপ্রদেশ, দিল্লী, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, চন্ডিগড়, হিমাচল, কাশ্মির,পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ছত্রিশগড়, উড়িষ্যা অর্থাৎ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত অর্থাৎ যেখান যেখান থেকে ভারতবর্ষ ঘূরে দেখা যায় সেখানে ঘুরে এসছেন।পুরো দেশ ঘুরে আসতে সময় লাগে এক বছর এক মাস ছয় দিন। মজার বিষয় হলো এতা পথ ঘুরে বাড়িতে যখন ফেরত আসেন তখনও সেই ২০০০ রুপি পকেটে ছিলো। এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন কল্পনার বাইরে। বাংলাদেশও তাই বলে জানালেন,তাকে কোন কিছুই কিনে খেতে হচ্ছে না। চলতি পথে সাইকেলে ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা থাকায় অনেকে সাইকেল থামিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করছেন,গল্প করছেন সাথে খাওয়াচ্ছেন বেশি রাত হলে নিজের বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতোটা অতিথিপরায়ন দেশ এখানে না আসলে আসলে জানতাম না।
ভারতের পাশের দেশ পাকিস্তানে যাওয়ার ই”ছা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,অবশ্যই পৃথিবীর সব দেশে যেতে চাই। আর পাকিস্তানেও যেতে চাই তবে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ভালো হয়ে উঠলে সেই সুযোগ আসবে বলে তিনি মনে করেন। স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে জানান, ভারতের লাদাখ এলাকায় একটি সড়ক রয়েছে যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম সেটি ২০২১ সালের ১৫ই আগষ্ট খোলা হয় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। সেখানে ১৫ই সেপ্টেম্বর তিনি সাইকেল নিয়ে পৌছান। যা কিনা বিশে^র কোন নাগরিক সেখানে সাইকেল নিয়ে পৌছানোর ঘটনায় রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছে বলে জানান ও ভারত সরকার থেকে পুরস্কার পান। রাজশাহী শহরটা কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,সত্যি খুব ভালো এখানের রাস্তাগুলো। জ্যাম নেই বললেই চলে। জ্যাম লাগলে কি কি ক্ষতি সেটিও এক নিমিষে জানিয়ে বলেন,জ্যাম লাগলে তেল বেশি পুড়বে। তেল পুড়লে দেশের খরচ বেশি হবে। সময় নষ্ট হবে। এজন্য রাস্তা বড় ও ট্রাফিক সিগন্যাল মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান অক্ষয় ভগত।
সানশাইন/টিএ